পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রকল্পের অফিসে গিয়ে চাঁদা দাবি করেছেন। মারধর করে নিয়ে গেছেন প্রায় ২ লাখ টাকা ও ময়লার ৪টি গাড়ি। ব্যবসা বন্ধ করে দিতে দিয়েছেন হুমকিও—এমন অভিযোগে সহযোগীসহ মামলা খেয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈম। গত ২৩ সেপ্টেম্বর দক্ষিণখান থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী নুরুল আক্তার। এদিকে ভুয়া সাক্ষী বানিয়ে এই মামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আসামিরা।
আসামিদের দাবি, মামলার সাক্ষীরা কেউ-ই এই ঘটনা দেখেননি। তবে নুরুলের কাছ থেকে তাঁরা শুনেছেন। এমনকি মামলা থেকে সাক্ষী হিসেবে তাঁদের নাম সরিয়ে দিতে থানা-পুলিশকে অনুরোধ করে যাচ্ছেন। তা ছাড়া ঘটনার পর সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, ওই সময় মূল আসামি নাঈম তাঁর নিজ কার্যালয়েই ছিলেন। আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানেও এমন দাবির সত্যতা মিলেছে। মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘কাউন্সিলর ও তাঁর লোকজন এলাকায় এসে কাউকে মারধর করেছেন, আমি এসবের কিছুই জানি না। তবে নুরুল আমাকে পরে বলেছে।’
আদালতের নির্দেশে দক্ষিণখান থানায় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নুরুলের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, নুরুল আক্তার ১৯৯০ সাল থেকে ডিএনসিসির ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের গাওয়াইর, আশকোনা, হাজী ক্যাম্প এলাকার রাস্তাঘাট, দোকানপাট, বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ ও অপসরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পরে বিভিন্ন সময় কাউন্সিলর ও তাঁর সহযোগীরা নিয়মিত চাঁদা দাবি করত। একপর্যায়ে চাঁদা না পেয়ে কাউন্সিলর ও তাঁর সহযোগীরা নুরুলের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মারধর করে ৪টি গাড়ি নিয়ে যায়। ১৯ নভেম্বর বিকেলে গাওয়াইর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রকল্পের অফিসে কাউন্সিলর নাঈম, রাজু, মাসুদসহ আরও অজ্ঞাত ৮-১০ জন গিয়ে ২ লাখ টাকা দাবি করেন। কাউন্সিলর নাঈম নুরুল আক্তারের শার্টের কলার ধরে মারধর করেন। পরে কর্মচারী মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন রাজু ও মাসুদ।
অনুসন্ধানে ডিএনসিসির ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্যালয়ে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন দুপুর ১টা ৫১ মিনিটে সেখানে প্রবেশ করেন স্থানীয় কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম। মাঝে একবার বের হয়ে ফের ঢুকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বৈঠক ও সাক্ষাৎকারে অংশ নেন তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক মিঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাক্ষীদের মধ্যে একজনের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি। ওই সাক্ষী মারামারি এবং চাঁদাবাজির কিছুই জানে না দাবি করেছেন।’
মামলায় অভিযুক্ত আনিসুর রহমান নাঈম বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ থেকে বড় পদ পেয়েছি। সামনে এমপি ইলেকশন করব ভেবে শত্রুতা করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। বাস্তবে এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।’ এদিকে মামলাকারী নুরুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কাউন্সিলর নাঈম টাকা দিয়ে সাক্ষী কিনে ফেলেছেন। ভয়েই কেউ মুখ খুলছে না। আমি এ বিষয়ে থানায় একটি জিডি করেছি।’