ঢাকার দোহার উপজেলায় ষষ্ঠ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ৩১ জানুয়ারি পাঁচ ইউপিতে ইভিএমে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত হচ্ছে দোহার উপজেলার পরিবেশ।
নির্বাচন সামনে রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের গাড়ি ভাঙচুর, কর্মীদের মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া গত সোমবার মুকসুদপুর ইউপিতে দুপুরে চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আ. হালিমের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে নয়াবাড়ি ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যানের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে। ১৫ জানুয়ারি বিকেলে নয়াবাড়ি ইউপির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আন্তা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান শামীম আহাম্মেদ হান্নান ও নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম আহমদ হান্নান জানান, তিনি উপজেলা পরিষদের মিটিং শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে নয়াবাড়ি ইউপির আন্তা এলাকায় পৌঁছালে ওত পেতে থাকা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তৈয়বুর রহমান তরুণ ও তাঁর লোকজন তাঁর ওপর হামলা চালান এবং গাড়ি ভাঙচুর করেন।
অভিযুক্ত তৈয়বুর রহমান তরুণ এ বিষয়ে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ মিথ্যা। আন্তা গ্রামে ক্যাম্প করতে গেলে তাঁরা আমার ওপর হামলা চালায়।’
মুকসুদপুর ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আ. হালিম বলেন, ‘আমি একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। সবার মতো আমারও নির্বাচনে প্রচার চালানোর অধিকার আছে। কিন্তু আমার পোস্টার-ব্যানার, হ্যান্ডবিল লাগাতে দিচ্ছে না বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ হান্নান খানের কর্মীরা।’
এ সময় হালিম অভিযোগ করে বলেন, ‘গত সোমবার দুপুরে আমার ভাই ও ছেলে পোস্টার লাগাতে যায়। এ সময় হঠাৎ ৫০টার মতো মোটরসাইকেলে করে হান্নান চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা আসেন। তাঁরা মুকসুদপুর বেকারীর সামনে আমার হাজার হাজার পোস্টার নষ্ট করেন এবং আমার প্রচার গাড়ির গ্লাস ভেঙে ফেলেন। এ সময় থানার এএসআই আতিকুর রহমানের উপস্থিতিতেই আমার ভাই আব্দুল করিমকে মারধর করেন তাঁরা। এএসআই আতিকুর রহমান চেষ্টা করেও তাঁদের ফেরাতে পারেননি।’
এ বিষয়ে মুকসুদপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান এম এ হান্নানের সঙ্গে কয়েক বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি তা বারবার কেটে দেন।
দোহার থানার এএসআই আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের থানায় মিটিং ছিল। শেষ করে যাওয়ার পথে দেখি পথে গ্যাঞ্জাম। গ্যাঞ্জাম দেখে আমি গাড়ি থেকে নেমে দেখি দুই প্রার্থীর লোকেরা ঝগড়া করছেন। পরে তাঁদের দুই পক্ষকে সরিয়ে দিই। পরে ছোট একটা ছেলে না বুঝে গাড়ির লুকিং গ্লাসে বাড়ি দিয়ে তা ভেঙে ফেলে। পরে আমি তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দিই।’ মামলা বা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি একটি ছোট ঘটনা। থানায় মামলা বা অভিযোগ করার মতো কোনো কিছু না।’
নির্বাচন নিয়ে নয়াবাড়ি ইউপির আন্তা গ্রামের আছিয়া বলেন, ‘এত দিন আমরা শান্তিতে ছিলাম। এখন নির্বাচন এসে মারামারি শুরু হয়েছে। আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন।’
স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াজেদ উদ্দিন ব্যাপারী বলেন, ‘আমরা চাই এই নির্বাচনে সুষ্ঠু ভাবে ভোট দিতে। আমরা কেন্দ্রে গিয়ে যাতে আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারি এটাই আমাদের চাওয়া।’
দোহার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটু সমস্যা ছিল, এখন তা ঠিক হয়ে গেছে। তবে আমরা নয়াবাড়ি ও বিলাশপুরকে হাই রেড জোনে রেখেছি। এই দুই ইউপিতে ভোটের দিন স্পেশাল ফোর্স থাকবে।’
এ বিষয়ে দোহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বিলাশপুরে এখনো কোনো রকম সমস্যা হয়নি, তবে মাঝে নয়াবাড়িতে একটু সমস্যা হয়েছিল। এখন সব প্রার্থী শান্তিপূর্ণভাবে তাঁদের প্রচার চালাচ্ছেন।’