কোথাও আগুন লাগলে প্রথমেই যাদের কথা মনে পড়ে, তারা হলো অগ্নিনির্বাপক বাহিনী। এর পাশাপাশি আমরা বলি দমকল বাহিনী। আর ইংরেজিতে বলা হয় ফায়ার সার্ভিস বা ফায়ার ব্রিগেড দল। কিন্তু এই আগুন নেভানোর সঙ্গে ‘দমকল’ শব্দটির সম্পর্ক কোথায়? কেন এই অগ্নিনির্বাপক বাহিনীকে আমরা ‘দমকল বাহিনী’ শব্দবন্ধ দিয়ে চিহ্নিত করি? তবে চলুন এ বিষয়ে কৌতূহলের আগুন ‘দমকল’ বাহিনী দিয়ে নিভিয়ে আসি!
ফারসি ‘দম’ এবং সংস্কৃত ‘কলা>কল’ শব্দসহযোগে তৈরি হয়েছে ‘দমকল’ শব্দটি। এর অর্থ আগুন নেভানোর যন্ত্রচালিত পাম্পবিশেষ যা দিয়ে পানি নিক্ষেপ করা হয়। একই সঙ্গে অগ্নিনির্বাপক গাড়িও এর অর্থপরিধির অন্তর্ভুক্ত। দমকল শব্দটি আমরা বাংলা ভাষায় প্রথম পাই ১৭৮২ সালে অগুস্তাঁ ওসাঁর শব্দকোষ থেকে। এবার আসি কেন এই নামকরণ।
এর ইতিহাস বলতে প্রায় দেড় শ বছর পিছিয়ে যেতে হবে। তখনকার কলকাতা শহরে আগুন লাগলে দমকল বিভাগে খবর যেতে যেতে আর ঘোড়ায় টানা গাড়িতে জল আসতে আসতে ৯৫ শতাংশ পুড়ে যেত। এর জন্য ব্রিটিশ সরকার শহরের মোড়ে মোড়ে ফায়ার ব্রিগেডকে সতর্ক করার জন্য যন্ত্র বসানোর ব্যবস্থা করল। যন্ত্রটি তৈরির কারিগর ছিলেন ব্রিটিশ অফিসার ক্যাপ্টেন বার্নাড অ্যানসন ওয়েস্টব্রুক। তাঁর তৈরি এই যন্ত্রে দেখা যায়, একটি লাল রঙের লোহার বাক্সের ভেতর কাচ দিয়ে ঘিরে রাখা একটা দম দেওয়া মেশিন।
এই মেশিনের তার সরাসরি সংযুক্ত করা হলো অগ্নিনির্বাপক অফিসের সঙ্গে এবং নির্দেশ জারি করা হলো কোথাও আগুন লাগলে নিকটবর্তী মেশিনের কাচ ভেঙে দম মেশিনের হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে তিন-চারবার দম দিতে হবে। দম দেওয়ার ফলে মেশিন এক সংকেত পাঠাত ওই অগ্নিনির্বাপক বিভাগে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ওই বিভাগ সহজেই সংকেত পর্যবেক্ষণ করে অতিদ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হতো।
ওই দম দেওয়া যন্ত্র, যার হাতল ঘোরালেই মাটির নিচে পাতা তারের মাধ্যমে ফায়ার ব্রিগেডের কাছে খবর চলে যেত, সেই থেকেই এই বাহিনীর নাম দমকল বাহিনী। প্রকৃতপক্ষে দম দেওয়া কল দিয়ে ডাকা হয় যে বাহিনীকে, তা-ই দমকল বাহিনী।
এ ছাড়া আরেকটা কারণ আছে এই নামকরণের। সেটি হলো ফায়ার ব্রিগেডের গাড়িতে যে জলের পাম্পগুলো থাকত, সেগুলোও চালাতে হতো হাতল ঘুরিয়ে, অর্থাৎ দম দিয়ে। প্রকৃতপক্ষে এই দুটো দম দেওয়া যন্ত্রের ফলেই ফায়ার ব্রিগেডের বাংলা নাম হয়ে গেল ‘দমকল’। আর এটি শুধু কলকাতায় নয়, ব্রিটিশরা ঢাকায়ও আগুন নেভানোর যথাযথ সংকেত পাওয়ার জন্য একই রকম যন্ত্র বসিয়েছিল।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক