পুরো পৃথিবীতে টি-শার্ট এখন তারুণ্যের পোশাক। একদিকে আরাম, অন্যদিকে বাহারি নকশার বৈচিত্র্য। এ দুটি গুণের কারণে তরুণেরা টি-শার্টকে প্রতিদিনের পোশাকের জায়গায় নিয়ে গেছেন। তারুণ্যের এ পোশাকে যখন ইতিহাস আর ঐতিহ্য যোগ হয় নকশার অনুষঙ্গে, তখন তা আর নিছক পোশাক থাকে না। হয়ে ওঠে প্রতীক। লাল-সবুজ যেমন বাংলাদেশের প্রতীক।
একটা সময়ে, বিশেষ করে বিজয় দিবসের মতো বিশেষ দিনগুলোয় শাড়ি ও পাঞ্জাবিই ছিল উপযোগী পোশাক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ধারণাও বদলে গেছে বলা চলে। বিশেষ দিনের পোশাক হিসেবে নারী-পুরুষ উভয়ের আলমারিতেই সগর্বে জায়গা করে নিচ্ছে টি-শার্ট।
বিগত বছরগুলোয় চোখ রাখলে দেখা যায় দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো বিজয় দিবসকে মাথায় রেখে পোশাকের নকশা করেছে। এবারও বিজয় দিবস উপলক্ষে ভিন্ন ভিন্ন ফ্যাশন হাউস টি-শার্টের নকশা করেছে। নকশা করা টি-শার্টের মধ্যে এপ্লিক, স্ক্রিন প্রিন্ট, হ্যান্ডপেইন্ট ও এমব্রয়ডারির কাজ প্রাধান্য পাচ্ছে। বিজয় দিবসের জন্য টি-শার্টে লাল-সবুজ রঙের প্রাধান্য থাকলেও সাদা, কালো, ছাই রঙের ওপরও কাজ করা হয়েছে।
আমাদের দেশে টি-শার্টকে সুদৃশ্য করে মানুষের প্রতিদিনের আরামদায়ক পোশাকের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে প্রথম যে নামটি বলতে হয়, সেটি নিত্য উপহার। তাদের টি-শার্টে বাংলাদেশের পতাকার প্রতিরূপ দেখা যায়। নিত্য উপহারের স্বত্বাধিকারী বাহার রহমান বলেন, ‘দেশীয় ঘরানার স্মারক তৈরির এক গভীর চেষ্টা ছিল এটি। টি-শার্টে বাংলাদেশের পতাকাকে তুলে ধরার পেছনে অতীতে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার প্রতিক্রিয়া, কোনো ঘটনায় সংবেদনশীলতার প্রতিফলন রয়েছে।’
বাহার রহমান পতাকার নকশায় টি-শার্ট বানানোর পেছনের গল্প জানালেন। ২০০৪ সালে স্লোভাকিয়ার তরুণ টমাস বিরস তাঁর স্নাতক শেষে বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন। নীলক্ষেতের পুরোনো বইয়ের দোকানে টি-শার্ট পরিহিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে দেখে জানতে চান, ‘কোথায় পাব?’ তাঁর কাছ থেকে সূত্র পেয়ে টমাস বিরস বাহার রহমানের সামনে হাজির হন। বলেন, ‘তোমাদের পতাকা ফুটে ওঠে, এ রকম কোনো স্যুভেনির, টি-শার্ট নেই?’ বাহার জানতে চান, বিরস কত দিন এ দেশে থাকবেন? সম্ভব হলে সে সময়ের মধ্যে তিনি তৈরি করে দেবেন বাংলাদেশের পতাকার নকশায় তৈরি করা টি-শার্ট। কিন্তু সে সময় আর সুযোগ হয়নি। তবে সঙ্গে করে দুটি টি-শার্ট নিয়ে যান বিরস। আরও একটির দাম অগ্রিম দিয়ে যান। সে বছর মে অথবা জুনে পাঠানো হয়েছিল সেই টি-শার্ট। সেটাই ছিল নিত্য উপহারের শুরু।
নিত্য উপহার ছাড়াও এখন অনেক ফ্যাশন হাউসই টি-শার্টে লাল-সবুজ ও পতাকা নিয়ে কাজ করছে। বিজয়ের ৫০ বছর উদ্যাপনে ‘যথাশিল্প’ লাল-সবুজ পতাকা ও মাত্রচিত্রের মোটিফে দুটি টি-শার্ট এনেছে। শতভাগ সুতির এই টি-শার্টগুলো নারী-পুরুষ উভয়ের উপযোগী। দাম ৪৭৫ টাকা। এ ছাড়া নকশীকাঁথার নকশায় এসেছে সবুজ ও কালো রঙের দুটি টি-শার্ট। বুকের ওপর নকশার নিচেই নকশীকাঁথার ফোঁড়ের আদলে লেখা আছে বাংলাদেশ। এই টি-শার্টের দামও যথারীতি ৪৭৫ টাকা।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশ এবার তাদের টি-শার্টের সংগ্রহে রেখেছে লাল, সবুজ ও লেমন রঙের তিনটি টি-শার্ট। স্ক্রিনপ্রিন্টের টি-শার্টগুলোর দাম ৫০০ টাকা।
আজিজ সুপার মার্কেটে দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড ডুয়েটের আউটলেটে লাল-সবুজে বিভিন্ন টি-শার্ট পাওয়া যাবে। এসব টি-শার্টের দাম ছোটদের ক্ষেত্রে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা ও বড়দের জন্য ৩০০ টাকা। দেশীদশের ফ্যাশন হাউস কে-ক্র্যাফট ও বিবিয়ানায় নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য টি-শার্ট পাওয়া যাবে ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।
এখন চাইলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো ব্র্যান্ডের টি-শার্ট ঘরে বসেই পাওয়া সম্ভব। সে জন্য ব্র্যান্ডগুলোর ওয়েবসাইট কিংবা ফেসবুক পেজের ইনবক্সে অর্ডার করতে হবে।