‘সাগরিকা’ নামে যে সিনেমাটিতে অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেন, সেই সিনেমায় রয়েছে একটি গান। ‘আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা থাকে সাত সাগর আর তের নদীর পারে’। গানটি লিখেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, সুর করেছিলেন রবীন চ্যাটার্জি।
আর গেয়েছিলেন শ্যামল মিত্র। সেটাই ছিল চলচ্চিত্রে শ্যামল মিত্রের প্রথম গাওয়া একক গান। গানটি শ্যামল মিত্রের গাওয়াই হতো না, কারণ এমন একটা বাজিতে তিনি হেরেছিলেন, যে বাজির শর্ত ছিল হেরে গেলে তাঁকে ছবিতে একক গান করার সুযোগ দেওয়া হবে না।
সুচিত্রা-উত্তম দুজনই আন্তরিক ছিলেন ‘সাগরিকা’য় অভিনয়ের ব্যাপারে। এ ছবিতে অভিনয় করে উত্তমকুমার পেয়েছিলেন দুই হাজার টাকা। সুচিত্রা সেন পেয়েছিলেন তিন হাজার টাকা। এতে তাঁদের দুজনের কেউই আপত্তি করেননি। সে সময় নায়িকারা নায়কদের তুলনায় বেশি টাকা পেতেন। ১৯৫৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ছবিটি মুক্তি পায়। সাগরিকার প্রথম শোর সময় দর্শকেরা যখন শেষ দৃশ্য পর্যন্ত বসে থাকলেন, তখন পরিচালক সরোজ দে (অগ্রগামীর তিনজনের একজন) বুঝলেন, ছবিটি দর্শকেরা গ্রহণ করেছেন। হল থেকে বেরিয়ে আবার দেখার জন্য অনেকেই টিকিট কাটছেন। এই সিনেমা হলে ছবিটি চলেছিল একটানা ২৪ সপ্তাহ!
ফেরা যাক শ্যামল মিত্রের কথায়। সিঁথির মোড়ে এমপি স্টুডিওতে তখন শ্যামল মিত্র প্রায়ই আসতেন। সরোজ দে আর শ্যামল মিত্র দুজনই খুব ভালো ব্যাডমিন্টন খেলতেন। সরোজ দে ছবি করবেন শুনে শ্যামল মিত্র তাঁকে বললেন, সেই ছবিতে তিনি যেন একটু সুযোগ পান। সরোজ দে শর্ত দিলেন শ্যামলকে, ‘আমাকে ব্যাডমিন্টনে হারাতে পারলে সুযোগ মিলবে।’
সাংঘাতিক খেলা হলো। তাতে হারলেন শ্যামল মিত্র। ফলে একক গান গাইতে পারবেন না ভেবে খুব মন খারাপ হলো তাঁর। সেটা দেখে সরোজ দে কিন্তু শ্যামলকে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন। তাতেই এই গানে অমর হয়ে রইলেন শ্যামল মিত্র।
সূত্র: আশিসতরু মুখোপাধ্যায়, মহানায়িকা সুচিত্রা, পৃষ্ঠা ৩৪-৩৭