পঞ্চগড়ের একমাত্র নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া বেগম। ১৫ বছর বয়সে বাবার অনুপ্রেরণা ও মেজো ভাইয়ের পথ ধরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দিতেন তিনি।
রোকেয়ার জন্ম তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের মুনিগছ গ্রামে। এখন তিনি জেলা শহরের মিলগেট এলাকায় বসবাস করছেন। তাঁর বাবা আব্দুর রহিম ছিলেন একজন দরজি। আর মা ছমিরন নেছা ছিলেন গৃহিণী। পরিবারে ৫ সন্তানের মধ্যে রোকেয়া বেগম ছিলেন তৃতীয়, বোনদের মধ্যে বড়।
রোকেয়া বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনে গ্রামের ছেলেরা মিটিং-মিছিল করে। তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। যুদ্ধ শুরু হলে আমার মেজো ভাই নাসিদুল ইসলামসহ গ্রামের অনেকেই যুদ্ধে চলে যান। এরপর থেকে ভাইয়ের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ছেলেকে হারানোর শোকে আমার মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তখনো বাবার মনোবল ছিল দৃঢ়। বাবাই আমাকে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। এপ্রিলের মধ্যভাগে বড় ভাই আব্বাস আলীর সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে বাড়ি থেকে বের হই।’
যুদ্ধ চলাকালীন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় অস্থায়ী ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে সেবিকা নিয়োগের খবর পেলে ছুটে যান রোকেয়া। বয়স কম হওয়ার কারণে প্রথমে তিনি বাদ পড়ে যান। কিন্তু অনেক অনুরোধে শেষ পর্যন্ত তিনি সেবিকা হিসাবে নিজেকে আত্মনিয়োগ সুযোগ পান। এরপর মুক্তিযুদ্ধকালীন ৬ নম্বর সেক্টর কমান্ডার এম. কে বাশার, বেসামরিক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম ও ডা. আতিয়ার রহমানের অধীনে থেকে তেঁতুলিয়ায় সেবিকা হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন সাহসী নারী রোকেয়া বেগম। যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ, আহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলতেন। যে ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর কাঁদিয়েছিল ছিল রোকেয়ার পরিবারকে। সেই মেজো ভাই নাসিদুল দেশ স্বাধীনের পর ফিরে আসেন বাড়িতে।
রোকেয়া বেগমের দিন কেমন কাটছে, জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এখন কোনো কাজ করতে পারি না। আমি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ভাতা দিচ্ছেন। আমি যে ভাতা পাচ্ছি, তা দিয়ে আমার চিকিৎসা, সংসারের খরচ চলছে। সরকার যদি আমাকে একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে শেষ বয়সে আমি একটু শান্তিতে থাকতে পারতাম।’
রোকেয়া বেগম দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন সুগার মিলে। বর্তমানে চাকরি থেকে অবসরে গেলেও এখনো অবসর ভাতার টাকা পাননি। তবে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা দিয়েই চলছে ৬৭ বছর বয়সী রোকেয়ার জীবনযাপন।