জনসংখ্যার দিক থেকে চীন বিশ্বের বৃহত্তম, আর আয়তনের দিক থেকে চতুর্থ বৃহৎ দেশ। কয়েকটি ছোটখাটো পার্টি থাকলেও চীনা কমিউনিস্ট পার্টিই (সিসিপি) দেশটির দণ্ডমুণ্ডের মূল। প্রতিবছরের মতো সম্প্রতি প্রায় সাড় ৯ কোটি সদস্যের দলটি সব অঞ্চলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকে বসেছে, যা পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন হিসেবে পরিচিত।
গত বৃহস্পতিবার চলতি বছরের চার দিনব্যাপী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন সমাপ্ত হয়েছে। এতে সারা দেশের প্রায় ৪০০ প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। রুদ্ধদার বৈঠকের বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। তবে গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বৈঠকের একটি সারমর্ম এবং গতকালের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে কিছু বিষয় আঁচ করা যায়।
এবারের বৈঠকে পার্টির ১০০ বছরের (১৯২১-২০২১) ইতিহাস, অর্জন এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একটি প্রস্তাব পাস, যা সিসিপির শতবছরের ইতিহাসে এবারসহ মাত্র তিনবার হয়েছে। এ প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছে, যা ১৯৮১ সালের পার্টির দ্বিতীয় প্রস্তাবের বিরোধী।
সাবেক প্রেসিডেন্ট দেং জিয়াওপিং (১৯৭৮-৮৯) ১৯৮১ সালে পার্টির বৈঠকে দ্বিতীয় প্রস্তাব এনেছিলেন। তাতে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুংয়ের ঐতিহাসিক ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লবের (১৯৬৬-৭৬)’ কিছু পদক্ষেপের সমালোচনা করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংস্কার করা হয় এবং এক ব্যক্তি পাঁচ বছর মেয়াদে দুবারের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত হয়। এত দিন এটাই চলে এসেছে।
কিন্তু এবারের প্রস্তাব সির তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট, সেনাবাহিনীর প্রধান এবং পার্টির প্রধান হওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত করেছে। আগামী বছরের শরতে পার্টির কংগ্রেসে তাঁকে এসব পদে পরবর্তী মেয়াদের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। পার্টির কংগ্রেস পাঁচ বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে। এতে সিসিপির জ্যেষ্ঠ নেতা জিয়াং জিনকুয়ান বলেন, ‘সি চিন পিং যত দিন আমাদের পথচলার মূল কান্ডারি হিসেবে থাকবেন, তত দিন পথ হারাবে না চীন।’ তা ছাড়া সি-কে ‘কান্ডারি’ এবং ‘গণনেতা’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি, যা ইতিপূর্বে শুধু মাও সেতুংকে বলা হতো; যিনি ১৯৪৯ সালের বিপ্লবের পর আমৃত্যু (১৯৭৬) দেশটির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।
১৯৪৯ সালের বিপ্লবের আগে ১৯৪৫ সালে পার্টির বৈঠকে প্রথম প্রস্তাবটি এনেছিলেন স্বয়ং মাও সেতুং। বিবিসির বলছে, এ প্রস্তাব পাস করা না হলে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন বা কমিউনিস্ট বিপ্লব করা হয়তো সম্ভব হতো না।