তখন আবু বকর সিদ্দিক অধ্যাপনা শুরু করেছেন। ‘সমকাল’ পত্রিকার লেখক। কলকাতা থেকে বের হওয়া পরিচয়, কবিতা, উত্তরসূরি, পূর্বাশা ইত্যাদি পত্রিকা নিয়মিত পড়ছেন। সেই ১৯৬৩ সালে তিনি ভিসা নিয়ে কলকাতায় গেলেন। শৈশবের অনেকটা কাল তাঁর কেটেছিল এই শহরে।
বুদ্ধদেব বসু আর প্রতিভা বসুর সঙ্গে দেখা হলো তাঁদের রাসবিহারি অ্যাভিনিউর বাড়িতে। সেখানেই বুদ্ধদেব অমিয় দেবকে বললেন, ‘তুমি ওঁকে একদিন কফিহাউসে নিয়ে গিয়ে শক্তি-সুনীলের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দাও।’
এরা কারা বুঝে উঠতে পারছিলেন না আবু বকর সিদ্দিক। বুঝিয়ে দিলেন বুদ্ধদেব বসু, ‘এরাই তো নিউটার্ক। কৃত্তিবাস করছে। আপনার ভালো লাগবে।’
ঠিক হলো অমিয় দেব ১৭ ফেব্রুয়ারি আবু বকর সিদ্দিককে নিয়ে যাবেন কফিহাউসে।
কথামতো কফিহাউসে গিয়ে দেখলেন সে এক রমরমা আড্ডা। ট্রেতে পট সাজিয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে বেয়ারার দল। অমিয় দেব এসে দাঁড়ালেন এক আড্ডায়। বললেন, ‘বুদ্ধদেব বসু পাঠিয়েছেন।’
সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকালেন আবু বকর সিদ্দিকের দিকে। একজন যুবক তাঁর বাঁ দিকের চেয়ারটা ছেড়ে দিলেন আবু বকরকে। তাঁর ঝুলপকেটে ধুতির সাদা কোঁচা। মুখ জোড়া কুচকুচে কালো গালপাট্টা দাড়ি। মাথায় ঝাঁকড়া চুল। তারস্বরে কথা বলেন। নিজেই বললেন, ‘আমি শক্তি চট্টোপাধ্যায়।’
আরও ছিলেন সেই আড্ডায় সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমীর সেনগুপ্ত আর সমর সোম। নতুন করে স্যান্ডউইচ আর কফির অর্ডার হলো। আবু বকরের পকেটে সমকাল ছিল। সেখানে তাঁর লেখা ‘জ্ঞানী বিধাতার ইচ্ছা’ আর ‘দয়া’ কবিতা দুটি কেটে কেটে পড়লেন শক্তি। তারপর নিজের পকেট থেকে সেদিনই লেখা দুটো কবিতা বের করে দিয়ে দিলেন আবু বকরকে। বললেন, ‘মূল কপি রেখে দিয়েছি।’ একটি কবিতার নাম ‘আজি অসতর্কভাবে’, অন্যটি ‘ডালিম’।
কবিতা দুটি অনেক দিন ছিল আবু বকর সিদ্দিকের কাছে। একদিন কেউ একজন সে কাগজ নিয়ে গিয়ে আর ফেরত দেয়নি। তবে ডায়েরিতে কবিতা দুটি তুলে রেখেছিলেন আবু বকর সিদ্দিক।
সূত্র: আবু বকর সিদ্দিক, প্রসঙ্গ শক্তি চট্টোপাধ্যায়, পৃষ্ঠা ৫৬-৫৭