অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় এবং তিনি দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। ৮ আগস্ট ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন। এরপর ১৬ আগস্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তাঁর প্রথম ফোনালাপ হয়।
শনিবার আজকের পত্রিকায় ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী ভারত’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়তে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত শুক্রবার ইউনূসকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি এই আগ্রহের কথা জানান মোদি নিজেই।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন। ড. ইউনূসের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব বাংলাদেশের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মোদি ফোনালাপে বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপর জোর দেন। জবাবে ইউনূস বলেন, সংখ্যালঘুসহ দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাঁর সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, ড. ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে, তার বেশির ভাগই অতিরঞ্জিত। প্রয়োজনে মাঠপর্যায়ে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা পরিস্থিতি দেখতে ভারতের সাংবাদিকেরা বাংলাদেশে আসতে পারেন।
দুই নেতা ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের টেলিফোন কল রিসিভ করেছি। বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছি। তিনি (ইউনূস) বাংলাদেশের হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘুর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন।’
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও ভারতে চলে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে দেশের মধ্যে নানা ধরনের আলোচনা আছে। অনেকে মনে করেন, শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসক হয়ে ওঠার পেছনে ভারত সরকারের ভূমিকা আছে। দেশে নামকাওয়াস্তে যে নির্বাচনব্যবস্থা শেখ হাসিনা চালু করেছিলেন, তাতে দিল্লির সায় ছিল। নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য শেখ হাসিনার সরকার ভারতকে অন্যায্য সুবিধা দিয়েছে এবং সে জন্যই পদত্যাগের পর তিনি ভারতে আশ্রয় নেওয়াই নিরাপদ ভেবেছেন। এই সব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা আছে। সব মিলিয়ে প্রতিবেশী দুটি দেশের সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কি না, তা নিয়েও কথা আছে।
এরই প্রেক্ষাপটে ইউনূস ও মোদির মধ্যে ফোনালাপকে শান্তি ও সম্প্রীতির স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।