চীন ও ভারত দুই প্রতিবেশীর মধ্যে গত ৭০ বছরে কখনো সুসম্পর্ক দেখা যায়নি; বরং সংঘাত উত্তরোত্তর বেড়েছে। বর্তমানে দেশ দুটি খারাপ সম্পর্ক পার করছে বলে গতকাল মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
ব্লুমবার্গ নিউ ইকোনমিক ফোরাম আয়োজিত ‘গ্রেটার পাওয়ার কমপিটিশন: দ্য ইমার্জিং ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, তা নিয়ে চীনাদের কোনো সংশয় আছে বলে আমার মনে হয় না। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে আমি অসংখ্যবার বৈঠক করেছি। আমাদের বক্তব্য তাঁকে খোলাখুলি বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘চীনের কারণেই আমাদের সম্পর্ক খারাপ সময় পার করছে। ওরা এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যা দুই দেশের চুক্তিকে লঙ্ঘন করছে। বিষয়গুলো তাদের ব্যাখ্যা করা উচিত। কিন্তু তারা তা করছে না।’
গ্যালওয়ান সংঘাত
বিবিসি জানায়, ভারতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল লাদাখের চীন সীমান্তে ভারতের অবকাঠামো নির্মাণ নিয়ে গত বছরের ৫ মে দুই দেশের সেনাদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। প্যাংগং হ্রদের এ সংঘাতের পর উভয় পক্ষ সীমান্তে সৈন্য ও ভারী অস্ত্রের সমাবেশ বাড়ায়। পরের মাসের ১৫-১৭ তারিখ একই অঞ্চলের গ্যালওয়ান উপত্যকায় উভয় পক্ষের সেনাদের মধ্যে বড় পরিসরে সংঘাত হয়।
এতে অন্তত ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। চীনের সেনাও নিহত হয়েছে। ভারতের দ্বিগুণ চীনা সেনা নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তবে এ নিয়ে মতভেদ আছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের সিকিম রাজ্যের চীন সীমান্তে উভয় দেশের সেনাদের মধ্যে সর্বশেষ সংঘাত হয়েছে। গুরুতর আহত হলেও কেউ নিহত হয়নি।
সীমান্ত পরিস্থিতি
ভারত-চীনের মধ্যে প্রায় ২ হাজার ১০০ মাইল দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। দুর্গম পাহাড়, নদী, বরফে ঢাকা এ সীমান্তের অধিকাংশ আন্তর্জাতিকভাবে অনির্ধারিত, যা লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ যে যতটুকু দখলে নিতে পারে, তা তার। তাই প্রতিবার সংঘাতের সময় কোনো দেশের ভেতরে বিপক্ষ যতটুকু ঢোকে, তা তার হয়ে যায়।
আলোচনা
২০২০ সালের সংঘর্ষের পর সীমান্ত উত্তেজনা মিটমাট করতে সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৩ দফা বৈঠক হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির বৈঠকের পর প্যাংগং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণ পাড় থেকে এবং আগস্টের বৈঠকের পর গগরা অঞ্চল থেকে উভয় পক্ষ সরে যেতে সম্মত হয়। ১০ অক্টোবর কোনো ফল ছাড়া তাদের সর্বশেষ বৈঠক শেষ হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে শিগগির ১৪তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে গত বৃহস্পতিবার যৌথ ঘোষণা দিয়েছেন দুই দেশের কূটনীতিকেরা।