ট্রফি হাজির। অথচ অপেক্ষা অধিনায়কদের। প্রায় এক ঘণ্টার ক্ষণ যখন ফুরোল, সময়মতো আসা অধিনায়কদের বিরক্তি পেয়ে বসেছে। প্রতি পদে পদে বিশৃঙ্খলা, বিতর্ক আর সমন্বয়হীনতার উদাহরণ হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) এটা একটা মাত্র দৃশ্য।
বিপিএল দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জাঁকজমক টুর্নামেন্ট। এক দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো গুছিয়ে একটা বড় টুর্নামেন্ট আয়োজনে ব্যর্থ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মিডিয়া প্লাজায় বিপিএলের পৃষ্ঠপোষকদের নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিপিএলের নানা সমস্যা নিয়ে প্রশ্নে জর্জরিত হলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুজন। ২২ বছর ধরে বিসিবিতে কর্মরত নিজাম উদ্দিন এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে যে কখনো পড়েননি, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ডিআরএসের ব্যবস্থা করতে না পারা, অগোছালো বিপিএল, পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে অপ্রকাশিত চুক্তির অঙ্ক—একের পর এক প্রশ্নে জেরবার বিসিবির এই শীর্ষ কর্তা। পুরো সংবাদ সম্মেলনে যে শব্দটা বেশি এল—সীমাবদ্ধতা।
বিপিএলের সীমাবদ্ধতা এখন এক প্রকার মাথা পেতেই নেন বিসিবির কর্তারা। ব্যতিক্রম হতে পারেননি নিজাম উদ্দিনও। আসলে সেই সুযোগই নেই। অথচ একটা সময় বিসিবির কর্তারাই বিপিএলকে আইপিএলের পরে রাখতেন! এখন যেন কোনোভাবে টুর্নামেন্টটি আয়োজনই তাদের বড় সার্থকতা। বিপিএল আয়োজনের উদ্দেশ্য নিয়ে নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আয়-রোজগার ও খেলোয়াড়দের উন্নতি (উদ্দেশ্য)। যেসব খেলোয়াড় আন্তর্জাতিকে এখনো সুযোগ হয়নি, তারা একটা সুযোগ পায় আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করার। তাদের সঙ্গে খেলার সুযোগ-সুবিধা পায়।’
এ ক্ষেত্রে বিসিবিও নিজেদের সীমাবদ্ধতা অকপটে মেনে নিচ্ছে। এ নিয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘আমাদের এখানে অবশ্যই সীমাবদ্ধতা ছিল। যে কারণে আমাদের প্রোডাকশন হাউস সেটা আনতে পারেনি। আমরাও এটা জানার পর নিজেদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই মুহূর্তে যারা ডিআরএস সার্ভিস দিয়ে থাকে, তাদের যথেষ্ট লোকবল নেই। ভারত সিরিজের পর ডিআরএসের জিনিসপত্র পড়ে আছে। কিন্তু ব্যবহার করার লোক নেই।’
ডিআরএস না পাওয়ার মূল কারণ অবশ্য ভিন্ন। ১০ জানুয়ারি থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন টি-টোয়েন্টি লিগ ‘এসএ ২০’ শুরু হতে যাচ্ছে। ১৩ জানুয়ারি শুরু হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘টি-টোয়েন্টি লিগ আইএল টি-২০’। প্রত্যেক ম্যাচে এ প্রযুক্তির পেছনে ব্যয় হয় ১৬-১৮ লাখ টাকার মতো। এ অর্থ ব্যয় করতে গেলে নির্ধারিত রাজস্ব আয়ে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা বিসিবির। অবশ্য এখানে নিজেদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা নেই বলেই দাবি নিজাম উদ্দিন চৌধুরীর, ‘এখানে টাকার বিষয় ছিল না। সব সময় চেষ্টা চালিয়ে গেছি। অন্য বোর্ডের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি কিন্তু তারা এ সময় সবাই ব্যস্ত। এটা আমাদের সীমাবদ্ধতার বাইরে চলে গেছে।’
সীমাবদ্ধতার মধ্যেই সফল হওয়ার আশা বিসিবির প্রধান নির্বাহীর, ‘শুধু বিসিবি না, ফ্র্যাঞ্চাইজিদের নিয়ে একসঙ্গে কীভাবে টুর্নামেন্ট সফল করব, সেটাই উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। সেভাবেই আমরা কাজ করছি। আমরা একটা দল হিসেবে চেষ্টা করব একসঙ্গে কাজ করে টুর্নামেন্ট সফলভাবে শেষ করতে।’