দশমিনা উপজেলায় অবৈধভাবে লোকালয়ে তৈরি করা হয়েছে ইটভাটা। সেই ভাটায় দেদার কাঠ পুড়িয়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে ইট। কাঠ প্রক্রিয়াজাত করার জন্য পাশেই বসানো হয়েছে অবৈধ করাতকল।
মালিকের দাবি, কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় কাঠ দিয়েই ইট পোড়ানো হচ্ছে। ভাটার মালিক আরও দাবি করেন, কাঠ পোড়ানোর বিষয়টি জানে ইউএনও অফিস, পটুয়াখালী ডিসি অফিস, পরিবেশ ছাড়পত্র কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই।
জানা যায়, উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের খারিজা বেতাগী গ্রামে জমির মৃধা বাজারসংলগ্ন লোকালয়ের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে ইটভাটা। সেখানে ফসলি জমির মাটি দিয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। ওই ভাটার মালিক ছিলেন বিদেশফেরত ইদ্রিস আহম্মেদ মুন্সি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাটামালিক ইদ্রিস প্রায় পাঁচ বছর আগে ভাটা ভাড়া দিয়ে অন্যত্র চলে যান। তার পর থেকে চারজন অংশীদার মালিক ন্যাশনাল ব্রিকস নামে ভাটাটি পরিচালনা করে আসছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট। ওই কাঠ প্রস্তুত করার জন্য পাশেই বসানো হয়েছে অবৈধ করাতকল। চারপাশে কয়েক হাজার মণ কাঠ সাজানো রয়েছে। স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ী মো. রিপন বলেন, ‘প্রতি মাসে ইটভাটায় আমরা চার-পাঁচজন মিলে প্রায় তিন থেকে চার শ মণ কাঠ দিয়ে আসছি।’
ন্যাশনাল ব্রিকসের ম্যানেজার মিজানুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো ঠিক না। বর্তমানে কয়লার দাম বেশি, তাই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। আমি ভাটার দেখাশোনা করি। মালিকেরা ঢাকায় আছেন, দু-এক দিন পর আসবেন। ইটভাটার জন্য কোনো লাইসেন্স নাই। সরকার লাইসেন্স দেয় না।’
ভাটাটির অংশীদার মালিক দেলোয়ার হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘কয়লার দাম বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে কাঠ দিয়েই ইট পোড়াতে হচ্ছে। তবে জানি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো অবৈধ। এ বিষয়ে ইউএনও অফিস, পটুয়াখালী ডিসি অফিস, পরিবেশ ছাড়পত্র কর্মকর্তা সবাই জানেন।’
দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, পরিবেশ ছাড়পত্র কর্মকর্তা কয়েক দিন আগে এখানে এসে দেখে গেছেন, পটুয়াখালীর সব জায়গায় কাঠ দিয়েই ইট পোড়ানো হচ্ছে। বৈধ কাগজপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবকিছু লকারে তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। আমার কাছে চাবি নেই।’
পরিবেশ অধিদপ্তর পটুয়াখালীর সদ্য যোগদানকারী সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দিন বলেন, ইটভাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও ডিসি অফিস থেকে লাইসেন্স অবশ্যই নিতে হবে। বিধিমালা অনুযায়ী অবশ্যই কয়লা দিয়ে ইট পোড়াতে হবে। কোনোভাবেই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর নিয়ম নেই। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহিউদ্দিন আল হেলাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। অতি দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’