ঢাকার কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লিতে বইতে শুরু করেছে শীতের আমেজ। দেশে এ বছর আগেভাগেই শীত পড়তে শুরু করায় ইতিমধ্যে শীতবস্ত্রের চাহিদা শুরু হয়েছে। গত দুই বছরে করোনার প্রভাব কাটিয়ে এই মৌসুমে ভালো বাণিজ্য হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব ও কাঁচামালের মূল্য বেশি হওয়ায় গতবারের তুলনায় এবারের শীতবস্ত্রের দাম একটু বেশি। তবে এটা ব্যবসায়িকভাবে তেমন প্রভাব ফেলবে না বলেও মনে করেন তাঁরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত ঈদ ও শীত মৌসুমে ব্যবসা করেন পোশাক ব্যবসায়ীরা। বাকি সময় এই দুই মৌসুমের জন্য পোশাক তৈরিতেই ব্যস্ত থাকেন তাঁরা। উপজেলার আগানগর ও শুভাঢ্যা ইউনিয়নে প্রায় ছয় হাজার ছোট বড় শোরুম রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা এখানে পোশাক কিনতে আসেন। দেশের প্রায় অর্ধেক পোশাকের জোগান দেন এই অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।
কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লিতে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতা ও কুলির হাঁকডাকে এলাকা মুখরিত। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু হয় এই ব্যস্ততা। বাহারি শীতবস্ত্রের পসরা নিয়ে অপেক্ষা করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশীয় তৈরি পোশাকের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও পোশাক সংগ্রহ করেন তাঁরা। দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরাও এসেছেন শীতপোশাক সংগ্রহ করতে।
এদিকে কয়েকটি পোশাক কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চলছে শীতপোশাক তৈরির শেষ সময়ের কাজ। সব বয়সের মানুষের জন্য বাহারি পোশাক তৈরিতে কাজ করছেন কারিগরেরা। এ বছর ব্লেজার ও সোয়েটারের পাশাপাশি মেয়েদের জন্য বাহারি ডিজাইনের সোয়েটার, কার্ডিগান ও ব্লেজার রয়েছে।
নূর সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. মামুন জানান, ‘শীতপোশাক সংগ্রহ করতে ইতিমধ্যেই দূরদূরান্ত থেকে পাইকারেরা আসা শুরু করেছেন। করোনার সময়ে কয়েক বছর ভালো ব্যবসা করতে পারিনি। আশা করছি, এবার ভালো ব্যবসা হবে। তবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও কাঁচামালের সংকটের কারণে এ বছর তৈরি পোশাকের দামও কিছুটা বেড়েছে। আশা করছি, এটা ব্যবসায়িকভাবে তেমন প্রভাব ফেলবে না, পাইকারেরাও বিষয়টি মেনে নেবেন।’
খুলনা থেকে আসা পাইকার বাবুল আহমেদ বলেন, ‘খুলনা নিউমার্কেটে আমার একটি তৈরি পোশাকের দোকান রয়েছে। আমি সারা বছর কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লি থেকে পোশাক নিয়ে ব্যবসা করি। এখানকার পোশাকের মান উন্নত, দামেও তুলনামূলক কম। ফলে এখান থেকে পোশাক সংগ্রহ করে দোকানে বিক্রি করলে লাভও হয় ভালো। পোশাকের সেলাই থেকে শুরু করে কাপড়ের মান ভালো হওয়ায় ক্রেতারাও সন্তুষ্ট থাকেন।’
কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ও দোকান মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুসলীম ঢালী বলেন, ‘এই অঞ্চলের ব্যবসার জন্য শীত মৌসুম অন্যতম। একে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন। বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাবে আমাদের উৎপাদন খরচও কিছুটা বেড়েছে। তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবার সীমিত লাভে পণ্য বিক্রি করব। কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার শীতের ব্যবসা ভালো হবে বলে আমরা আশা করছি।’