ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর এক দিন পরেই বাড়ানো হলো এলপিজির দাম। ফলে প্রায় সব ধরনের জ্বালানি ব্যবহারে এবং এই জ্বালানিসংশ্লিষ্ট সবকিছুর জন্য পকেট কাটা যাবে সাধারণ মানুষের। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গতকাল বৃহস্পতিবার এই বাড়তি দাম নির্ধারণ করে।
চলতি নভেম্বরের জন্য কেজিতে সাড়ে ৪ টাকা হারে বাড়িয়ে এলপিজির নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এই নিয়ে পরপর পাঁচ মাস বাড়ল এলপিজির দাম। জানা গেছে, বেসরকারি পর্যায়ে এলপিজি মূসকসহ প্রতি কেজি ১০৪ দশমিক ৯২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৯ দশমিক ৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৫৯ টাকা থেকে বেড়ে এখন ১ হাজার ৩১৩ টাকা হবে। গতকাল থেকে নতুন এই দাম কার্যকর হয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই দাম ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, সচিব রুবিনা ফেরদৌসীসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগের দিনই বুধবার রাতে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম ৬৫ থেকে এক ধাক্কায় বাড়িয়ে ৮০ টাকা করে সরকার। তখনো যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়তে থাকায় ‘লোকসান কমাতে’ দাম বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে গত অক্টোবর মাসে এলপিজি মূসকসহ প্রতি কেজি ৮৬ টাকা ৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০৪ দশমিক ৯২ টাকা করেছিল বিইআরসি। এর ফলে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম অক্টোবর মাসে ১ হাজার ৩৩ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ২৫৯ টাকা হয়। গত ১০ অক্টোবর থেকে এই দাম কার্যকর করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরিবহনে ব্যবহৃত এলপি গ্যাসের (অটোগ্যাস) দামও বাড়ানো হয়েছে। নভেম্বর মাসের জন্য অটোগ্যাসের দাম প্রতি লিটার ৫৮ দশমিক ৬৮ থেকে বাড়িয়ে ৬১ টাকা ১৮ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। লিটারে বেড়েছে প্রায় ২ টাকা ৫০ পয়সা। গত অক্টোবরে যা বেড়েছিল ৮ টাকা ১২ পয়সা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সৌদি সিপি অনুসারে সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে প্রোপেন ও বিউটেনের দাম যথাক্রমে প্রতি টন ৮৭০ এবং ৮৩০ ডলার, মিশ্রণ অনুপাত ৩৫: ৬৫ বিবেচনায় নভেম্বরের জন্য এই নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরামকো। এটি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপি ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করছে বিইআরসি।
জানা গেছে, এলপিজির দাম সমন্বয় করা হলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম মানেন না ব্যবসায়ীরা। খুচরা পর্যায়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয় এলপিজি সিলিন্ডার। ফলে এলপিজি ব্যবহারে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তার।
এই দাম বাড়ার বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার নাম করে মাসে মাসে দাম বাড়ানো আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যৌক্তিক নয়। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রভাব দেশের বাজারে পড়ে না।’ এ জন্য বিইআরসির এলপিজির দাম বাড়ানোর পদ্ধতিটা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, বিইআরসি যেটা করছে, তাতে ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষিত হচ্ছে না।