টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার কাশতলা গ্রামের একটি বসতবাড়ি থেকে গতকাল সকালে এক প্রবাসীর বৃদ্ধ মা ও স্ত্রীসহ তিনজনের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেছে ঘাটাইল থানা-পুলিশ। এ সময় অর্ধমৃত অবস্থায় এক শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে খুনের কারণ সম্পর্কে এখনো কিছু জানায়নি পুলিশ।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন, সৌদিপ্রবাসী জয়েন উদ্দিনের স্ত্রী সুমি বেগম (২৫), মা জমেলা খাতুন (৬০) এবং শাহজালাল ইসলাম সোহাগ (৩০)। সোহাগ কালিহাতী উপজেলার সাতুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা।
নিহত জমেলার আরেক পুত্রবধূ শাহনাজ বেগম গতকাল জানান, সকালে তাঁর শাশুড়ির ঘুম থেকে উঠতে দেরি দেখে তিনি ঘরের দরজায় কড়া নাড়েন। ভেতর থেকে তাঁদের কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় বাড়ির অন্যদের ডেকে আনেন। এরপর সবাই মিলে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে খাটের ওপর সুমি ও অজ্ঞাত এক যুবকের এবং মেঝেতে তাঁর শাশুড়ির রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় তাঁরা সুমির চার বছরের ছেলে শাফিকে অর্ধমৃত অবস্থায় উদ্ধার করে দ্রুত টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। তার মাথায় ভারী কিছুর আঘাত আছে বলে উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন।
খবর পেয়ে ঘাটাইল থানা-পুলিশ এবং র্যাবের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। লাশের পাশে শ্যালো মেশিনের হ্যান্ডেল, রেঞ্জ এবং রড পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রতিটি লাশের মাথার পেছনের অংশে গভীর আঘাতের চিহ্ন ছিল। পুলিশের ধারণা, হত্যাকাণ্ড ঘটানোর কাজে এসব মেশিনারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে।
জয়েন উদ্দিনের প্রতিবেশী উজ্জ্বল মিয়া বলেন, বিয়ের আগেই সুমির সঙ্গে শাহজালালের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পারিবারিকভাবে সুমিকে প্রবাসী জয়েন উদ্দিনের সঙ্গে বিয়ে দিলেও সে বিয়ে মেনে নেয়নি। একসময় সন্তানসহ পালিয়ে গিয়ে শাহজালালকে বিয়ে করে এবং জয়েন উদ্দিনকে তালাক দেয়। খবর পেয়ে জয়েন উদ্দিন সৌদি আরব থেকে দেশে এসে শ্বশুরের সহযোগিতায় সুমিকে পুনরায় বিয়ে করেন। এ সময় সুমি শাহজালালকে তালাক দেয়। বিয়ে করার প্রায় তিন মাস পর গত ২৯ জুলাই জয়েন উদ্দিন আবার সৌদি আরব চলে যান।
ঘরে সুমির লাশ যেখানে পড়ে ছিল তার পাশে একটি দেয়ালে লেখা ছিল, ‘এমনটা হতো না যদি আমার সুমি আমার কাছে থাকত। এই সবের জন্য সুমির বাবা দায়ী।’ প্রতিবেশীরা বলছেন, এই লেখা শাহজালালের। তবে তাঁর মা বলছেন, তাঁর ছেলে লেখাপড়া করেনি। সে লিখতে পারে না। তাঁর ছেলেকে ডেকে নিয়ে কেউ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজহারুল ইসলাম সরকার বলেন, লাশ তিনটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা এবং কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।