জসীমউদ্দীন বহুমুখী পরিচয়ে পরিচিত। তিনি একাধারে কবি, কাব্য ঔপন্যাসিক, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, ভ্রমণকাহিনিকার, নাট্যকার, স্মৃতিকথক, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক।
বিশ শতকের তৃতীয় দশকে বাংলা কাব্যের ভুবনে জসীমউদ্দীনের আবির্ভাব। একসময় রবীন্দ্রনাথের দাপুটে প্রভাব ছিল এবং কবি কাজী নজরুলের জনপ্রিয়তা সবাইকে ছাড়িয়ে আকাশ-চূড়ায় পৌঁছেছে। এর মধ্যেই রবীন্দ্রনাথের প্রভাবের বিরুদ্ধে একঝাঁক কবির বিদ্রোহ শুরু হলো। ঠিক এ সময়ে আবির্ভূত হলেন জসীমউদ্দীন, সম্পূর্ণ ভিন্ন কাব্যের পথ ধরে। পল্লি বাংলার প্রকৃতি এবং তাদের সুখ-দুঃখ সঙ্গী করে তিনি কবিতা রচনার পথে পা বাড়ালেন। সে জন্যই তিনি পল্লিকবি নামে খ্যাত। ভাবে, ভাষায়, ভঙ্গিতে তাঁর কবিতা যেন বাংলাদেশের চিরচেনা সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি।
জসীমউদ্দীনের কর্মজীবন শুরু হয় পল্লিসাহিত্যের সংগ্রাহক হিসেবে। স্নাতকোত্তরে পড়াকালে দীনেশচন্দ্র সেনের আনুকূল্যে এবং তাঁর অধীনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারী হন। ১৯৩৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। এরপর ১৯৪৪ সালে প্রথমে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকার এবং পরে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তাঁর কবি শক্তির প্রকাশ ঘটে ছাত্রজীবনেই। কলেজজীবনে ‘কবর’ কবিতা রচনা করে তিনি বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই তাঁর এ কবিতাটি প্রবেশিকা বাংলা সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়। কবি হিসেবে এটি তাঁর এক অসামান্য সাফল্য। তাঁর ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ ১৯৪০ সালের মধ্যে একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়। ১৯৬৯ সালে ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ ইউনেসকোর অনুবাদ প্রকল্পে দ্বিতীয় গ্রন্থ হিসেবে অনূদিত হয়। তিনি লোকসংগীত সংগ্রহ করেছেন ১০ হাজারের বেশি।
প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন পল্লিকবি জসীমউদ্দীন। এ কারণেই ষাটের দশকে পাকিস্তান সরকার রেডিও ও টেলিভিশন থেকে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধের উদ্যোগ নিলে অনেকের মতো তিনিও এর তীব্র প্রতিবাদ করেন।
এই কবির জন্ম ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে, মামাবাড়িতে।