বরগুনার বেতাগীতে মেয়েকে নিয়ে গোয়াল ঘরে থাকা মকবুল হাওলাদারের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি হচ্ছে। বেতাগী পৌরসভার মেয়র এবিএম গোলাম কবিরের উদ্যোগে এ বাড়ি নির্মিত হচ্ছে।
মকবুল হাওলাদার বেতাগী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঝিলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর চার ছেলে ঢাকায় কাজ করে। তবে তাঁরা বাবার কোনো খোঁজ-খবর নেয় না। তাই অসুস্থ শরীর নিয়ে লাঠি ও মেয়ের কাঁধে ভর দিয়ে পেটের তাগিদে গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করেন তিনি।
মানুষের কাছে হাত পেতে যদি কিছু জোটে তা দিয়েই বাবা–মেয়ের পেট চলে। গত বর্ষায় তাঁর বসতঘরটি ভেঙে যায়। সেই থেকে প্রতিবেশী খালেক হাওলাদারের গোয়াল ঘরে মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন বিপত্নীক মকুবল। এ নিয়ে আজকের পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ‘ঘর না থাকায় মেয়েকে নিয়ে প্রতিবেশীর গোয়াল ঘরে’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়।
খবরটি বেতাগী পৌর মেয়রের নজরে আসে। এরপর গত শুক্রবার তিনি বৃদ্ধ মকবুলের বাড়ি গিয়ে তাঁর খোঁজ খবর নেন। চিকিৎসার জন্য তিনি মকবুলকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পাশাপাশি শীতের কাপড় ও নগদ অর্থ সহায়তা দেন। পাশাপাশি দ্রুতই একটি ঘর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন মেয়র।
বেতাগী পৌর এবিএম গোলাম কবির বলেন, ‘আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পত্রিকার খবরটি সম্পর্কে জানতে পারি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি অসহায় বৃদ্ধ এবং তাঁর মেয়ের মানবেতর জীবনযাপনের কথা। অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে তাই তাঁর বাড়ি যাই। এসময় তাদের নগদ কিছু অর্থ এবং শীতের পোশাক দিয়ে সাহায্য করি। পাশাপাশি তাদের জন্য দ্রুত একটি বাড়ি নির্মাণের জন্য মালামাল পাঠাই। আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যে ঘরের নির্মাণকাজ শেষ হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মকবুল হাওলাদার বলেন, ‘মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। শীতের রাতে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। টাকার অভাবে ঘর তুলতে পারি নাই। তবে মেয়র গোলাম কবির নগদ অর্থ আর কম্বল দিয়ে সাহায্য করেছে। একটা বাড়ি বানিয়ে দেবে বলেও কথা দিয়েছেন। আল্লাহ তাঁকে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখুক।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও সদর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, বৃদ্ধ মকবুল তার মেয়েকে নিয়ে খুব মানবেতর জীবন যাপন করছেন। জমি দান করার মতো কেউ না থাকায় মকবুলকে মুজিব বর্ষের ঘরের তালিকায় নাম দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে মেয়র মানবিক কারণে মকবুলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন।
পৌর মেয়রের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সংস্থাও অসহায় মকবুলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের মধ্যে একজন পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের সহধর্মিণী ও পুনাক সভানেত্রী বেগম জীশান মির্জা।
তিনিও মকবুল হাওলাদারকে সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান।
তিনি বলেন, মকবুলের খবরটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এটি জীশান মির্জার নজরে আসে। এতে তিনি খুব মর্মাহত হন আইজিপি পত্নী।