অভাবের কারণে পড়ালেখার পাঠ চুকাতে হয় পঞ্চম শ্রেণিতে। দিনমজুর বাবার একার আয়ে চলত না ছয় সদস্যের সংসার। প্রায়ই অনাহারে-অর্ধাহারে কাটত দিন। তাই কিশোরী বয়সেই দিয়ে দেওয়া হয় বিয়ে। স্বামীর সংসারে এসেও দেখেন আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা দারিদ্র্য।
এই অভাব আর দারিদ্র্য মেনে নিতে পারেননি তিনি। স্বপ্ন দেখেন কিছু একটা করার। শুরু করেন ভেড়া পালন। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। ভেড়ার বদৌলতে এখন তিনি টিনের বাড়ি আর আবাদি জমির মালিক।
বলছিলাম তারাগঞ্জের ইকরচালী ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের শরিফা বেগমের কথা। তিনি শুধু নিজের ভাগ্য বদল করেই থেমে থাকেননি। প্রতিবেশী, নিজের গ্রাম আর আশপাশের গ্রামের অভাবী নারীদের পথ দেখিয়েছেন। এলাকায় প্রায় ৪০০ নারী এখন ভেড়া পালন করছেন। শরিফার বাড়ির মতোই এলাকার প্রতিটি বাড়িতে এখন ভেড়ার খামার।
সম্প্রতি লক্ষ্মীপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মাঠ ও বিভিন্ন বাড়ির উঠানে অসংখ্য ভেড়া আর ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছে। শরিফার বাড়িতে পৌঁছে তাঁকে দেখা গেল হাতে কাঁঠালপাতা নিয়ে ভেড়া ও ছাগলকে খাওচ্ছেন।
শরিফা জানান, ২০০৯ সালে তাঁর বাড়িতে দাওয়াত খেতে আসেন মামা মন্তাজুর রহমান। তাঁর কিছু করার উদ্যোগের কথা শুনে ভেড়া পালনের পরামর্শ দেন। তখন মা অলিমা বেগম গলার সোনার চেন বিক্রির ২ হাজার টাকা শরিফার হাতে তুলে দেন। ওই টাকা দিয়ে তিনি দুটি ভেড়া কিনে লালনপালন শুরু করেন।
বছর না ঘুরতেই ভেড়া দুটি তিনবারে ১২টি বাচ্চা দেয়। বিক্রি করে আয় হয় ১২ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে শরিফা ভেড়া পালনের পাশাপাশি চালের ব্যবসা শুরু করেন। বদলাতে থাকে ভাগ্যের চাকা। বর্তমান তাঁর খামারে ৩৫টি ভেড়া আছে।
ভেড়া বিক্রির আয়ের টাকায় খড়ের ঘরের জায়গায় টিনের ঘর করেছেন শরিফা। কিনেছে আবাদি জমি। বাড়িতে নলকূপ ও স্যানিটারি টয়লেট বসেছে। আম ও কাঁঠালের গাছ লাগিয়েছেন বাড়ির চারদিকে। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে লেখাপড়া করছে। আত্মনির্ভরশীল শরিফা এলাকাবাসী ও পরিবারের কাছে হয়ে উঠেছেন শ্রদ্ধার মানুষ।
শরিফার বলেন, ‘ভেড়া আমার ভাগ্যে খুলি দিছে। আগে অনেক কষ্টে ছিলাম। এখন সেই কষ্ট নেই। ভেড়া পালন করি বাড়ি, ঘর, জমি করছি। তিন বেলা ভালো খাবার, ভালো কাপড় পরছি। এখন আমার সুখের সংসার। এলাকার লোক সম্মান করে। ভেড়া পালনের জন্য বিভিন্ন গ্রামের বউরা পরামর্শ নেয়।’
তারাগঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভেড়া লক্ষ্মীপুর গ্রামে পালন করা হচ্ছে বলে জানান উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফরহাদ নোমান। তিনি বলেন, শরিফা একজন আদর্শ ভেড়া পালনকারী।