বইমেলায় শুক্র ও শনিবারের চিত্রটা একটু ভিন্ন। সকাল থেকেই মিষ্টি রোদ মেখে মেলার শিশুচত্বরে ঢুকে পড়ে শহরের কচি মুখগুলো। সঙ্গে থাকেন বাবা-মা আর আত্মীয়স্বজন। শিশুদের আগমনে প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে বইমেলা। তাদের কলকাকলিতে ভরে ওঠে শিশুচত্বর। গতকালও তা-ই হয়েছে।
পল্টন থেকে বইমেলায় এসেছেন রুবেল হোসেন, সঙ্গে দুই ভাগনি আয়াত আর লিনু। তারা গতকাল ভীষণ আনন্দ করেছে। ছবি এঁকেছে। রূপকথার বই কিনেছে। হালুম, ইকরিদের সঙ্গে মজা করেছে।
রুবেল হোসেন বলেন, ‘ছুটির দিন, তাই ভাগনিদের নিয়ে এসেছি। ওয়ার্কিং ডেতে কাজ থাকে, আবার বাচ্চাদের স্কুল, কোচিং থাকে। সময় পাওয়া যায় না। তাই আজ নিয়ে এলাম। টিভির পর্দায় ওদের (সিসিমপুরের চরিত্র) দেখে, এবার নিজের চোখে দেখল।’
বইমেলায় শিশুচত্বরের মূল আকর্ষণ সিসিমপুর অনুষ্ঠানের চরিত্রদের হাজির হওয়া। গতকাল তিনবার তারা শিশুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়।বেলা সাড়ে ১১টা, সাড়ে ৩টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। এ ছাড়া সকালে বাচ্চারা এঁকেছে রং দিয়ে নানা ধরনের ছবি।
শিশুচত্বর ঘিরে স্টলে স্টলে সাজানো হয়েছে শিশুদের বই। প্রকাশক ও বিক্রয়কর্মীরা জানিয়েছেন, শিশুদের বই ভালো চলছে। বেশি চলছে কমিকস, ভূত, রূপকথার গল্প। চিলড্রেন পাবলিকেশন্সের বিক্রয়কর্মী হাবিবা আক্তার মিম বলেন, ‘আমাদের থেকে রূপকথার গল্প আর ভূতের গল্পের বই বেশি কিনছে বাচ্চারা। বাবা-মায়েরা অবশ্য কিনে দিচ্ছেন সুকুমার রায়ের বই, বিভিন্ন লেখকের বাচ্চাদের সেরা গল্প।’
ঝিঙেফুল প্রকাশনীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় থাকা জামাল খান জানান, সুকুমার রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লুৎফর রহমান রিটন, আলী ইমামের বই কিনছে বেশি।
শিশু গ্রন্থ কুটিরে বাচ্চাদের পছন্দ ধাঁধার বই। নাম্বার ও বর্ণের সিরিজও চলছে। আর আহসান হাবিবের কমিকস চলছে বেশ। প্রগতি পাবলিশার্সের সামনে বেশ ভিড় দেখা গেল। তারা দারুণ একটি কাজ করেছে শিশুদের নিয়ে, যাকে বলে পপআপ বই। যে চরিত্রকে নিয়ে বই, সেটি বই খুললেই বেরিয়ে আসে। বাচ্চারা ভীষণ পছন্দ করেছে বইগুলো। এই প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী নেয়ামুল হোসেন বলেন, আহসান হাবিবের ‘কুকুর’, ‘পেংগুইন আর পেঁচা’ বইগুলো ভালো চলছে।
তাম্রলিপি প্রকাশনী থেকে শিশুদের তিনটি বই এসেছে। ‘আমি পারি ও আমি খাই’ সিরিজ এবং ‘রঙে রঙে অংক শিখি’। প্রকাশনীটির প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর (সায়েন্স) নূরে আশরাফী জান্নাত বলেন, ‘আমাদের শিশুদের বইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ভালো বিক্রি হচ্ছে “রঙে রঙে অংক শিখি”, “আমি দাঁত ব্রাশ করতে পারি” এবং “আমি সবজি খাই” নামের বইগুলো। বাচ্চাদের নিজের কাজ নিজে করা এবং খাওয়াদাওয়া সহজ করতে আমি পারি ও আমি খাই সিরিজ দুটি করা হয়েছে।’
গতকাল ছিল মেলার ১৬তম দিন। বাংলা একাডেমির তথ্য অনুযায়ী মেলাতে ২৯৮টি বই এসেছে। মেলায় আসা নতুন বইয়ের সংখ্যা ১৬২৪টি। ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল মেলায় ছিল উপচে পড়া ভিড়।