কবি মোহাম্মদ রফিককে কেন পি রফিক নামে ডাকা হতো, সে কথা বলার আগে সেই সময়ের ঢাকা শহরের কথা বলে নেওয়া দরকার। ঢাকা তখন আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে উঠছে। প্রায় গ্রামের মতো একটি জায়গায় গড়ে উঠছে নতুন শহর। নতুন নতুন স্থাপনা যেন নতুন নতুন গল্পের জন্ম দিচ্ছে।
সেই ঢাকা শহরের একটা রাস্তার নাম ছিল ‘কুলি রোড’, সে কথা এখন অনেকেই জানে না। নামটি মুর্শিদকুলী খাঁর নাম থেকে এসেছিল নাকি অন্য কোনখান থেকে এসেছিল, সে বিষয়েও বিশেষ কিছু জানা যায় না। সে সময় সেখানে বর্ষাকালে রাস্তায় থাকত প্যাঁচপেঁচে কাদা, চলত গরুর গাড়ি, দুপাশে ছিল ধানখেত, অড়হরখেত। বিদ্যুৎ ছিল না। আম, কাঁঠালগাছ ছিল, ছিল বটগাছ, পলাশগাছ, শিমুলগাছ। এই ‘কুলি রোড’-এর নাম পরে হয়েছিল গ্রিন রোড। এখনো গ্রিন রোড নামেই তা রয়ে গেছে।
আব্দুল মান্নান সৈয়দরা থাকতেন এখানে। নাজিমুদ্দিন রোড থেকে ঢাকা কলেজ তত দিনে স্থানান্তরিত হয়েছে নীলক্ষেতের অন্তঃসীমানায়। সেখানে টিনশেডে তৈরি হয়েছে নীলক্ষেত ব্যারাক আর আজিমপুরে স্থাপিত হয়েছে সরকারি কর্মচারীদের জন্য আজিমপুর কলোনি। ঢাকা কলেজে মান্নান সৈয়দদের পাঁচজনের একটি দল তৈরি হয়ে গেল। সিকান্দার দারাশিকোহ, মফিজুল আলম, আমিনুল ইসলাম বেদু, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এবং আব্দুল মান্নান সৈয়দ। এই দলের প্রত্যেকেই লেখালেখিতে ছিলেন আগ্রহী। ইলিয়াস ছিলেন নামকরণে ওস্তাদ ব্যক্তি। মোহাম্মদ রফিক সম্ভবত তখন পড়তেন তাঁদের এক ক্লাস নিচে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস মোহাম্মদ রফিকের নাম রাখলেন পি রফিক। মুখে মুখে একসময় মোহাম্মদ রফিক হয়ে গেলেন শুধু পি। এমনকি বিয়ের পর তাঁর বউও পি নামেই তাঁকে ডাকতেন এবং চিনতেন। অনেকেই ভাবতেন পি হচ্ছে মোহাম্মদ রফিকের কোনো উপাধি। আসলে পি মানে ছিল ‘পাগলা’।
সূত্র: আব্দুল মান্নান সৈয়দ, স্মৃতির ঢাকা, পৃষ্ঠা ৪১-৪৫