১৯২৭ সালের সেপ্টেম্বরের একটি দিন ছিল বৃষ্টিভেজা। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ভেসে যাচ্ছে কলকাতার সুউচ্চ অট্টালিকা, ভেসে যাচ্ছে জীর্ণ বস্তি।
কোনোমতে মালকোচা মারা ধুতি আর শার্ট সামলাতে সামলাতে পঙ্কজ মল্লিক ক্যানিং স্ট্রিট বেয়ে চলেছেন সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউর দিকে। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এগোনোর আর পথ খোলা থাকল না। একটা গাড়ি-বারান্দার নিচে অন্য অনেকের মতো আশ্রয় নিলেন পঙ্কজ। সেখানে দাঁড়িয়ে গুনগুন করে গাইলেন, ‘এমন দিনে তারে বলা যায়...’। হঠাৎ কেউ একজন তাঁর পিঠে টোকা মারলেন। বললেন, ‘কাম ইন।’
ভেতরে ঢোকার পর ভাঙা বাংলায় তিনি জানালেন, তাঁর নাম রামস্বামী আয়েঙ্গার এবং এই ডিসপেন্সারির মালিক তিনি। বললেন, ‘আপনি গুনগুন করে খুব সুন্দর গান করছিলেন। আমাকে একটু শোনাবেন?’
পঙ্কজ আবার গাইলেন, ‘এমন দিনে তারে বলা যায়...’। গান শেষ হতেই ডাক্তার সাহেব প্রথম কলির সুরটুকু গেয়ে শোনালেন। তারপর বললেন, ‘ডু ইউ লাইক টু ব্রডকাস্ট? কলকাতায় রেডিও স্টেশন হয়েছে। আমার জানাশোনা আছে। যদি গাইতে চান তো বলুন।’
‘না’ বলার কথা না পঙ্কজের। রেডিও তখন বেসরকারি কোম্পানি। ডাক্তারবাবু পঙ্কজের নাম-ঠিকানা লিখে রাখলেন।
তারপর একদিন পঙ্কজ দেখেন, তাঁর বাড়ির সামনে একটা পালকি, পালকিতে ডাক্তারবাবু। ডাক্তারবাবু পঙ্কজকে নিয়ে হাজির হলেন নৃপেন মজুমদারের কাছে। তিনি তখন প্রোগ্রাম ডিরেক্টর। নৃপেন মজুমদার বললেন, ‘আজই আপনার গান ব্রডকাস্ট হবে।’
১৯২৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় পঙ্কজের প্রথম বেতার অনুষ্ঠান প্রচারিত হলো। তিনি গাইলেন ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’, আর ‘একদা তুমি প্রিয়ে’ গান দুটি।
সেদিনই নৃপেন মজুমদার বললেন, ‘আপনি ইচ্ছে করলে বেতারে যোগ দিতে পারেন।’
জীবন ও জীবিকা একই কাজে মিলে যাবে, তা ভাবতেও পারেননি পঙ্কজ। তিনি সাড়া দিলেন নৃপেন মজুমদারের আহ্বানে।
সূত্র: পঙ্কজ কুমার মল্লিক, আমার যুগে আমার গান, পৃষ্ঠা ৫০-৫২