বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। প্রায় দুই যুগ আগে এই জেলায় চা চাষ শুরু হয়। ক্রমে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুরে ছড়িয়ে পড়ে সমতলের চা চাষ। কিন্তু দুই যুগ আগে যে সম্ভাবনা নিয়ে সমতলে চা চাষ শুরু হয়েছিল, তা ফিকে হয়ে আসছে। দাম না পেয়ে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। তাঁদের অভিযোগ, কারখানার মালিকেরা সিন্ডিকেট করে তাঁদের সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দামে চা বিক্রি করতে বাধ্য করছেন।
চাষিরা বলছেন, চা-পাতার সরকার-নির্ধারিত দাম প্রতি কেজি ১৮ টাকা। কিন্তু কোনো কারখানাই এ দরে চা-পাতা কিনছে না। এ ছাড়া বড় পাতা থাকার অজুহাত দেখিয়ে কারখানাগুলো মোট ওজনের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত দাম কম দিচ্ছে। এদিকে চা চাষে আগের তুলনায় খরচ বেড়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করাসহ নয় দফা দাবিতে গত রোববার জাতীয় চা দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন করেন পঞ্চগড়ের চা-চাষিরা। তাঁদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, কাঁচা চা-পাতার দাম প্রতি কেজি ৪০ টাকা নির্ধারণ করা।
চা বাগান মালিক সমিতির সভাপতি দিদারুল আলম বলেন, চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানার মালিকেরা সিন্ডিকেট করে চা-পাতার দাম কম দিচ্ছেন। প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে চা চাষ দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাবে।
পঞ্চগড়ে চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র বলেছে, গত বছর এই অঞ্চল থেকে রেকর্ড ১ কোটি ৭৭ লাখ ৬০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, যা জাতীয় উৎপাদনের ১৯ শতাংশ। এই অঞ্চলে প্রায় ১৩ হাজার একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু পঞ্চগড়েই ১০ হাজার একরের বেশি জমিতে চা চাষ হয়। বড় বাগানের পাশাপাশি ক্ষুদ্র চা-চাষির সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি।
তেঁতুলিয়া উপজেলার সারিয়ালজোত এলাকার সাইদ আলী জানান, ঋণ নিয়ে বাড়ির পাশের এক একর জমিতে চায়ের আবাদ করেছিলেন তিনি। প্রথম দিকে ভালোই দাম পেয়েছেন। কিন্তু গত দুই বছর দাম এত কম যে তিনি চা বাগান কেটে অন্য ফসল আবাদ শুরু করেছেন।
চা-চাষি ও পঞ্চগড় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান শেখ মিলন বলেন, ‘চায়ের আবাদ করে আমরা যেন অভিশাপ ডেকে এনেছি। কারখানার সিন্ডিকেটে আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি। কারখানার মালিকেরা নির্ধারিত ১৮ টাকা তো দিচ্ছেনই না, তার ওপর মোট ওজন থেকে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কেটে অবশিষ্ট ওজনের মূল্য দিচ্ছেন। আমরা সবকিছু বাদ দিয়ে পাচ্ছি ১০ থেকে ১২ টাকা। অথচ প্রতি কেজি পাতা উৎপাদনে খরচ হয় ১৪ থেকে ১৫ টাকা। অনেক চাষি বাধ্য হয়ে চা বাগান কেটে অন্য ফসলের আবাদ শুরু করেছেন।’
তবে তেঁতুলিয়া বিসমিল্লাহ টি ফ্যাক্টরির মালিক জাহাঙ্গির আলম বলেন, ‘খরার কারণে প্রথম দিকে সে রকম চা-পাতা পাওয়া যায়নি। এখন অনেক চাষি একসঙ্গে পাতা আনায় আমরা বিপাকে পড়েছি। তবে আমরা প্রশাসনের নির্ধারিত দরেই চা-পাতা কিনছি।’
কাঁচা চা-পাতা মূল্য নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, খুব শিগগির সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসে নতুন মূল্য নির্ধারণ এবং অন্যান্য সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে।