ফুল অন্ন, হাফ অন্ন—রেস্তোরাঁয় ঢুকে খাদ্যতালিকায় যদি এমন শব্দ দেখন, ঘাবড়াবেন না। বুঝবেন, নিরামিষ খেতে আপনি ঠিক জায়গাতেই এসেছেন। এবার একটি টেবিল দখলে নিয়ে বসে পড়ুন। তারপর সামনের ট্রেতে সাজানো সারি সারি বাটি থেকে বেছে নিন ছানার রসা, সয়াবিন রসা, আলু-ফুলকপির রসা, লাউ মুগ, আলুর দম কিংবা সুক্ত। দামের কথা চিন্তা না করে খেতে শুরু করুন। দাম দেওয়ার সময় চমকে যাবেন!
তাঁতীবাজারের নিরামিষ খাবার
পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার একসময় বিখ্যাত ছিল তাঁতের কাপড় এবং তার বাণিজ্যের জন্য। আর এখন বিখ্যাত শাঁখা, সোনার ব্যবসা এবং নিরামিষ খাবারের জন্য। ঢাকা শহরে যারা নিরামিষ খান, বাড়ির বাইরে তাঁদের জন্য একমাত্র জায়গা তাঁতীবাজার। স্বামীবাগের আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইসকন মন্দিরের ক্যানটিন কিংবা টিকাটুলীর রামকৃষ্ণ মিশনেও নিরামিষ খাবার খাওয়া যায়। তবে সেগুলো মন্দির কার্যক্রমের অংশ। ক্রেতা হিসেবে ইচ্ছেমতো কিনে খাওয়ার স্বাধীনতা সেগুলোতে পাবেন না। কিন্তু তাঁতীবাজারে সে স্বাধীনতা পাওয়া যাবে।
তাঁতীবাজার শিবমন্দিরকে পেছনে রেখে সামনের দিকে এগোতে থাকলে একটি অর্ধবৃত্ত পথ তৈরি হবে। এই পথের ডানে-বাঁয়ে তাকালে চোখে পড়বে জগন্নাথ ভোজনালয়, অনুরাধা, আদি গোবিন্দ, বিষ্ণুপ্রিয়া, গৌড় নিতাই, শ্রীচৈতন্য নামের সাইনবোর্ড। এগুলো আসলে রেস্তোরাঁর নাম। নিরামিষ খাবারের জন্য এগুলোর যেকোনো একটিতে ঢুকে যেতে পারেন।
নিরামিষ খাবার মানে রসুন-পেঁয়াজ, মাছ-মাংস-ডিম ছাড়া খাবার। এসব খাবারের মূল উপাদান মূলত শাকসবজি ও ডাল। সঙ্গে থাকতে পারে পাঁপড়, সবজি বা পালের বড়া, ডালের বড়ি, ছানা, পনির কিংবা সয়াবিনের সংগত। হালকা মসলায় রান্না এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী তেমনি স্বাদেও দুর্দান্ত।
এক দুপুরে তাঁতীবাজার ও শাঁখারীবাজার চষে বেড়িয়ে আমরা ঢুকে পড়েছিলাম ১১০ তাঁতীবাজারের দোতলায়, জগন্নাথ ভোজনালয়ে। ছোট রেস্তোরাঁ। সে তুলনায় মানুষ বেশি। লাইনে দাঁড়িয়ে টেবিল দখল করে বসতেই চোখ ছানাবড়া! টেবিলের ওপর আগে থেকে সাজানো ট্রেতে সারি দিয়ে রাখা তরকারির বাটি। এক, দুই, তিন করে গুনে দেখি ১৬টি বাটি। প্রতিটি বাটিতে আলাদা আলাদা তরকারি। কিন্তু বেসিনের সামনে ঝোলানো খাদ্যতালিকায় লেখা আছে ৫৪টি খাবারের নাম ও দাম। এই রেস্তোরাঁর বর্তমান মালিক অজয় কৃষ্ণ দাশ ওরফে অশোক কবিরাজ জানালেন, মৌসুমে যেসব শাক ও সবজি পাওয়া যায় সেগুলো দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ পদের নিরামিষ রান্না হয় জগন্নাথ ভোজনালয়ে।
সবজির এ তরকারিগুলোই ঘুরেফিরে রান্না হয় প্রতিটি রেস্তোরাঁয়। তবে তরকারির সংখ্যায় কম বেশি হয়। অনুরাধা, আদি গোবিন্দ, বিষ্ণুপ্রিয়া, গৌড় নিতাই, শ্রীচৈতন্য নামের রেস্তোরাঁগুলোতে গড়ে ১২টির মতো নিরামিষ পদ রান্না হয় প্রতিদিন। এই রেস্তোরাঁগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এর মালিকেরা সবাই নিরামিষাশী। ফলে নিরামিষ খাবার সম্পর্কে তাঁদের ধারণা খুব স্বচ্ছ। এগুলোতে প্রতিদিন বাজার করে রান্নাবান্না হয় বলে খাবার তাজা পাওয়া যায়। এ জন্য স্বাদের ক্ষেত্রে প্রায় প্রতিটি রেস্তোরাঁর খ্যাতি আছে।
দরদাম
তাঁতীবাজারের নিরামিষ রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের দাম সবারই মোটামুটি একই রকম থাকে। এখানে পুরো প্লেট ভাতের দাম ২০ টাকা আর অর্ধেক ১০ টাকা। রসা বা ঘন্টর মতো তরকারিগুলোর দাম প্রতি বাটি ৪০-৪৫ টাকার মধ্যে। সব ধরনের শাকের বাটি ৩০ টাকা, ভাজি ও ডালের বাটি ২০ টাকা, সব ধরনের ভর্তা ১৫ টাকা প্রতিটি, চাটনি ৩০ টাকা, পায়েস ৪০ টাকা। আলুর দম, বাদাম ভুনা, শসার তরকারি, আলু ফ্রাই, সাবুর পায়েস প্রতি বাটি ৪৫ টাকা।