বাবা চেয়েছিলেন নির্মলেন্দু গুণ চিকিৎসাবিদ্যা শিখুক। পড়াশোনায় ভালো ছিলেন, তাই বাবা সেটা চাইতেই পারেন। ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট—দুটো পরীক্ষাতেই প্রথম বিভাগ পেয়েছিলেন নির্মলেন্দু গুণ। ইন্টারমিডিয়েটে নিজের কলেজ থেকে একাই প্রথম বিভাগ পেয়েছিলেন। সে সময় সারা ঢাকায় প্রথম বিভাগ পেয়েছিলেন ১১৯ জন।
মেডিকেল থেকেও ফরম কেনা হয়েছিল। কিন্তু বাবাকে গুণ বললেন, ‘আমি তো রোগা-পাতলা কাঠখোট্টা। এ রকম ডাক্তারকে কেউ মান্য করবে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন ফার্মাসি বিভাগ খোলা হয়েছে। সেখানে ভর্তি হওয়ার জন্য গেলেন গুণ। কাগজপত্র জমা দিতে গিয়ে দেখলেন, সেগুলো অ্যাটাস্টেড করাতে হবে। এখন কীভাবে করাবেন? একজন পিয়ন পেলে হতো। পিয়নের মাধ্যমে কোনো স্যারের কাছে গিয়ে তাঁকে দিয়ে অ্যাটাস্টেড করানো যায়। এ সময় দেখলেন একজন মানুষ সিঁড়ি দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে উঠছেন। তাঁকে পিয়ন ঠাওরালেন গুণ। গুণ অনুরোধ করলেন, ‘ভাই, আপনি আমাকে একটু সাহায্য করতে পারেন?’
‘কী সাহায্য?’
‘আমার ফটো আর মার্কশিট অ্যাটাস্টেড করাতে হবে। আপনি যদি কোনো টিচারের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন, তাহলে এটা আমি করতে পারব।’
তিনি আপাদমস্তক দেখলেন গুণকে। তারপর বললেন, ‘ঠিক আছে, আমার সঙ্গে এসো।’
একজন পিয়ন তাঁকে ‘তুমি’ বলছে, তাতে খুব অহংকারে লাগল গুণের। তবে লোকটা বয়স্ক, তাই মেনে নিলেন।
লোকটা চেয়ারম্যানের ঘর খুললেন। তার মানে সাক্ষাৎ চেয়ারম্যানের পিয়নের সঙ্গে দেখা হয়েছে গুণের! গুণকে তাজ্জব করে দিয়ে লোকটা বসে পড়লেন চেয়ারম্যানের চেয়ারে। গুণ এতক্ষণে বুঝলেন, কী ভুলটাই না করেছেন। চেয়ারম্যান বললেন, ‘বসো।’ তারপর মার্কশিট দেখে বললেন, ‘তুমি তো ভালোই মার্কস পেয়েছ। তারপরও নিয়ম অনুযায়ী তোমাকে একটা পরীক্ষা দিতে হবে।’
গুণ বললেন, ‘স্যার, আপনাকে চিনতে পারিনি, মাফ করে দিয়েন।’
তিনি বললেন, ‘অনেকেই আমাকে চিনতে পারে না।’
তিনি ছিলেন ফার্মাসি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. জব্বার।
সূত্র: লোপা মমতাজ, ইতিহাসের ফুটনোট, পৃষ্ঠা ১০৩-১০৪