গান লেখা, সুর করা, সিনেমা নির্মাণ—সব ক্ষেত্রেই সফল ছিলেন আব্বু (গাজী মাজহারুল আনোয়ার)। তিনি ছিলেন মাটির মানুষ, ভালো মনের মানুষ। কখনোই অহংকার করতেন না। সবার সঙ্গে মিশতে ভালোবাসতেন। সম্মানহানি হবে—এমন কাজ কখনোই করতেন না, সন্তানদেরও করতে দিতেন না। তাঁর মধ্যে অসম্ভব কৃতজ্ঞতাবোধ ছিল।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে যাঁদের সহায়তা পেয়েছেন, সব সময় তাঁদের স্মরণ করতেন। বিশেষ করে সত্য সাহা, যাঁর হাত ধরে মিডিয়ায় তাঁর পথচলা শুরু হয়েছিল। আব্বু বলতেন, ‘সত্য সাহার কারণেই আমি গাজী মাজহারুল আনোয়ার হতে পেরেছি।’
ছোটবেলা থেকেই আব্বু ছিলেন আমার ও আমার ভাইয়ের পুরো পৃথিবী। তখন থেকেই দেখেছি, আব্বু কাজ নিয়ে ব্যস্ত। সকালে বাসা থেকে বের হতেন, ফিরতেন রাতে। আমি অপেক্ষা করতাম। সারা দিন যা যা করেছি তা আব্বুকে না বলে ঘুমোতে পারতাম না। যত বড় হয়েছি, আব্বুর সঙ্গে সম্পর্কটা আরও গাঢ় হয়েছে। তিনি গান নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করতেন। দেখা যেত, বাসায় পায়চারি করছেন, এর মাঝেই দুটো লাইন মাথায় এল। তখন আমাকে বলতেন, ‘মা এই সুরটা তুলে রাখো তো।’ যখন কাজে বসতেন, আমি সেটা শোনাতাম। এরপর পরিমার্জন করে তৈরি হতো নতুন গান। এমন অনেক কালজয়ী গান আছে, যেটা প্রথম আমি গেয়েছি। পরে অন্য শিল্পীদের কণ্ঠে উঠেছে।
আব্বু মারা যান ৪ সেপ্টেম্বর। আগের দিন ফোনে তাঁকে বললাম, যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুবাই যাচ্ছি। সেখানে ১০ দিন থেকে বাংলাদেশে ফিরব। তিনি বললেন, দুবাই নেমেই যেন তাঁকে ফোন করি। বিমান থেকে নেমেই ফেসবুকে দেখলাম, আব্বু নেই। আমার বুকের ভেতরটা গুঁড়িয়ে গেল, চোখটা ঝাপসা হয়ে এল। দুবাই থেকে বাংলাদেশে আসতে সময় লেগেছিল ৫ ঘণ্টার মতো। মনে হচ্ছিল, আমি যেন পাঁচ যুগের বেশি সময় ধরে বিমানে আছি।
আব্বু চলে যাওয়ার পর তাঁর গানগুলো সংরক্ষণে কাজ করছি। ইতিমধ্যে তাঁর লেখা গান নিয়ে ‘অল্প কথার গল্প গান’ বইয়ের তিনটি সংস্করণ প্রকাশ হয়েছে। আরও কাজ চলছে। আমার জন্য তিনি ১৭টি গান লিখে গেছেন। সেগুলো প্রকাশের প্রক্রিয়া চলছে। ৫টি গানের রেকর্ডিং সম্পন্ন হয়েছে। মিউজিক ভিডিও আকারে ধারাবাহিকভাবে গানগুলো প্রকাশ করব। তাঁর নামে একটি মিউজিক একাডেমি চালু করার পরিকল্পনা করছি। সরকারের কাছে আব্বুর নামে একটি সড়ক ও পাঠ্যপুস্তকে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান করেছি। তথ্যমন্ত্রী মহোদয় এ বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।