হোম > ছাপা সংস্করণ

অজানা শঙ্কায় কাটছে দিন

স্বপ্না রেজা

সামনে নির্বাচন। দেশ শাসনে ক্ষমতা অর্জনের নির্বাচন। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বেশ তৎপরতা দেখাচ্ছে প্রতিদিন। রীতিমতো পাল্টাপাল্টি। এক দল সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ামাত্রই আরেক দল কর্মসূচির ঘোষণা দিচ্ছে। অনেকটা মুখোমুখি অবস্থান। শুধু অবস্থানই নয়, মুখ কারোরই সংযত থাকছে না।

আক্রমণাত্মক ভাষায় এক দল আরেক দলের সমালোচনা করছে, গালিগালাজ করছে, যা ইচ্ছে তা-ই বলছে। বলতে দ্বিধা নেই, দেশের দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দলের এমন আচরণ নতুন না হলেও বর্তমানে যে লাগামছাড়া আচরণ তারা করছে কিংবা দেখাচ্ছে, তা কোনোভাবেই সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিচ্ছে না। ভয় ও নানান আশঙ্কায় তারা ভাবছে—কী হতে যাচ্ছে! রাজনৈতিক দলগুলোর অসহিষ্ণু, বেপরোয়া আচরণ ও কথাবার্তা অনেকের কাছে শোভনীয়ও লাগছে না।

এমনিতেই বাজারে নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ জীবনযাপনে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় খেটে খাওয়া মানুষের আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দায় সাধারণ মানুষ দিশেহারা। রিজার্ভের অবস্থা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নেই। বরং ক্রমেই তা নিম্নমুখী। বাংলাদেশের বিভাজিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক চক্রান্তের পথকে প্রশস্ত করছে বলেই আশঙ্কা। রাজনৈতিক বড় দুই দলের অনৈক্য তৃতীয় কোনো শক্তির অনুপ্রবেশের সুযোগ ঘটাবে কি না, তা নিয়েও আলোচনা আছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এতটাই ক্ষমতাকেন্দ্রিক যে, ক্ষমতায় বসার বিষয়টিই তাদের কাছে সব সময় অগ্রাধিকার পায়। আর তাই দেশের স্বার্থে কখনোই রাজনৈতিক সম্প্রীতি দেখা যায়নি, ঐক্য গড়ে ওঠেনি। একসঙ্গে মিলেমিশে চিন্তা করার, কাজ করার মানসিকতা থাকে না। তারা নিজেদের নিয়ে এতটাই মগ্ন যে বাজার থেকে মানুষ কী কিনে খেতে পারে বা পারছে, তা নিয়ে কোনো ভাবনা কিংবা মাথাব্যথা নেই। বিএনপি বর্তমানে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিকে ইস্যু হিসেবে না নিয়ে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক চেতনায় একজন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও কেয়ারটেকার সরকারের আওতায় নির্বাচনের দাবি নিয়েই মাঠে নেমে আন্দোলন করছে। একটা সময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ছাড়া বিএনপির আন্দোলনের কোনো ইস্যু ছিল না। দলটির কর্মসূচিতে হাতেগোনা লোকের উপস্থিতি দেখা যেত। এখন চিত্র বদলেছে। মিছিল ও সভা-সমাবেশে অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। কী করে সম্ভব হলো? কারণ, মিছিল-মিটিংয়ের জন্য মাথাপিছু যত টাকা ঢালা যায়, ততই লোকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। লোকসমাগম রাজনীতিতে কোনো ব্যাপারই নয়। একই কথা প্রযোজ্য আওয়ামী লীগের বেলায়ও। যদি স্বচ্ছতার সঙ্গে বিষয়টি দেখা যায়, তাহলে এমন সত্যই বেরিয়ে আসবে। রাজনৈতিক সমাবেশে খুব কমসংখ্যক সাধারণ মানুষই উপস্থিত হয়। যেটুকু হয়, তা রাজনৈতিক দলের সমর্থনে ও অর্থের বিনিময়ে। এটা কোনো দলই অস্বীকার করতে পারবে না।

একজন অতি সাধারণ নাগরিক বিস্ময় কণ্ঠে বলছিলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না আওয়ামী লীগ সরকার, বিএনপি ক্ষমতায় বসলে কী করে পারবে! তবে কি বিএনপির হাতের মুঠোয় ব্যবসায়ী মহল রয়েছে? আরেকজন বলছিলেন, এই দেশ তো ব্যবসায়ীরাই চালান। সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের সরবরাহ বন্ধ করে কিংবা দাম বাড়িয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করে দেন। স্বয়ং বাণিজ্যমন্ত্রী এমন কথা বলেছেন। টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জনগণের দ্রব্যসামগ্রী কেনার বিষয়টিকে তিনি সরকারের অর্জন বলে মনে করেছেন। সাধারণ জনগণ কঠিন সময় পার করলেও সেদিকে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক নেতাদের যে ধরনের পাল্টাপাল্টি উন্নাসিক কথাবার্তা, তা কিন্তু সাধারণ ও অরাজনৈতিক জনগণ পছন্দ করে না, করছে না। উপরন্তু, বিদেশি বা বাইরের শক্তির অনুপ্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমেরিকার ভিসা নীতি, ইউরোপিয়ানদের পোশাকশিল্প নিয়ে শুল্ক আরোপের চিন্তাভাবনা—এসব ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতারই ফল।

বাংলাদেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দলের বিভাজনে যে খাল খনন হয়েছে, তা-ই আমেরিকাকে মানবাধিকার ইস্যুতে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে। বাইরের শক্তি নিয়ে বিএনপির উচ্ছ্বাস মোটেও স্বস্তিকর নয়। আমেরিকার ভিসা নীতি নিয়ে ক্ষমতাসীন সরকার ও রাজনৈতিক নেতাদের কথাবার্তায় বিচলিত ভাব প্রকাশ না পেলেও সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিকেরা বিচলিত। কারণ, তাঁদের পরিবারের অসংখ্য সন্তান আমেরিকায় পড়াশোনার স্বপ্ন দেখে। আবার বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের যে আন্তর্জাতিক বাজার চাহিদা, সেটাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় পোশাকশিল্পের মালিকেরা উদ্বেগে আছেন।

আদতে আমরা কোন দিকে যাচ্ছি, কী হবে পরিণতি—এমন শঙ্কাজনিত প্রশ্ন কমবেশি সবার। রাজনৈতিক বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা থেকে শেখার কিছুই নেই। একজন অভিভাবক বলছিলেন, যখন টিভির টক শোয় দুই দলের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন, তখন টিভি বন্ধ করে দিই। হিংস্রতা, আক্রমণাত্মক আচরণ যেন শিশুসন্তান দেখতে না পায়। তাঁরা যেসব কথাবার্তা বলেন, তা শুনে নাগরিক হিসেবে আমাদের লজ্জা পেতে হয়।

যদি জরিপ চালানো যেত সাধারণ মানুষ নির্বাচন সম্পর্কে কী ভাবছে, তাহলে হয়তো দেখা যেত নির্বাচন নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা নেই। সাম্প্রতিক বিভিন্ন নির্বাচনে ভোট প্রদানে তাঁদের অনীহার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। মানুষ তার সামর্থ্যের মধ্যে জীবনযাপনের সুযোগ চায়, চায় নিরাপত্তা। নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তী যে সরকার আসবে, সে কি পারবে সব অনিয়ম আর অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিকে নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণে আনতে?

মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ না পেলে, সম্ভাবনা না দেখলে তার ভেতরে মানসিক অসুস্থতা বাসা বাঁধে। নিরাপত্তাহীনতা জন্ম নেয়। তিন বেলা খেতে পাওয়া, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার নিরাপত্তার বিষয়টি প্রত্যেক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিই চায় তার সামর্থ্যের মধ্যে হোক। বাংলাদেশে এমন পরিবারের সংখ্যাই বেশি, যারা হাত পেতে অন্যের দয়ায় জীবিকা নির্বাহ করতে চায় না। এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি, যারা দুর্নীতি করে না। সুতরাং, সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতির মধ্যে জিম্মি রেখে রাজনীতির ক্ষমতাকেন্দ্রিক দাবা খেলা বন্ধ হোক। রাজনীতি হোক জনগণের স্বার্থে।

স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ