চলচ্চিত্র প্রযোজক ও নির্মাতাদের প্রেরণা দিতেই দেওয়া হয় সরকারি অনুদান। ১৯৭৬-৭৭ অর্থবছর থেকে দেশীয় চলচ্চিত্রে সরকারি এ অনুদান চালু হয়। চলতি অর্থবছরে ২২টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৬টি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমাকে দেওয়া হয়েছে অনুদান। প্রতিবছর প্রযোজক ও নির্মাতা বদল হলেও বদল হয় না অনুদানের সিনেমা নির্মাণের চিত্র। সরকারি অনুদান নীতিমালায় বলা আছে, অনুদানের প্রথম চেকপ্রাপ্তির ৯ মাসের মধ্যে সিনেমার কাজ শেষ করতে হবে। তবে বিশেষ অবস্থায় অনুরোধ সাপেক্ষে পরিচালক সময় বৃদ্ধি করতে পারেন। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক নির্মাতা সিনেমা নির্মাণে বছরের পর বছর সময় পার করছেন। টাকা নিয়ে সিনেমা না বানানোর জন্য মামলাও হয়েছে কয়েকজনের বিরুদ্ধে। গত বছর এক নির্মাতাকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
নির্মাণের এই দীর্ঘসূত্রতা বহাল আছে ২০২১-২২ অর্থবছরের অনুদানের সিনেমার বেলায়ও। ২১টি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমাকে অনুদান দেওয়া হলেও বেশির ভাগ সিনেমার কাজ শেষ হয়নি এখনো। কিছু সিনেমার শুটিংই শুরু হয়নি। গত অর্থবছরে ‘১৯৬৯’ সিনেমার জন্য সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। চেকপ্রাপ্তির ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও শুরু করতে পারেননি শুটিং। এ বিষয়ে অমিতাভ রেজা বলেন, ‘এটা বিগ অ্যারেঞ্জমেন্টের সিনেমা। এখনো চিত্রনাট্য পরিমার্জনের কাজ চলছে। এরপর অভিনয়শিল্পী চূড়ান্ত করে শুটিংয়ে যাব। আশা করি আগামী বছর শুটিং শুরু করতে পারব।’
একই অবস্থা ‘আর্জি’ সিনেমার। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় মন্ত্রণালয়ের কাছে সময় চেয়েছেন প্রযোজক ও পরিচালক কামাল মোহাম্মদ কিবরিয়া লিপু। তিনি বলেছেন, ‘ঈদের পরেই আমরা শুটিং শুরু করব, তখন আনুষ্ঠানিকভাবে জানাব।’
রেজা ঘটক পরিচালিত “ডেডো’র গল্প” সিনেমারও শুটিং শুরু হবে কোরবানির ঈদের পর। নির্মাতা বলেন, ‘আমাদের সিনেমাটি প্রিয়ডিকাল সিনেমা, তাই প্রি-প্রোডাকশনে বেশি সময় নিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করছি জুলাই মাসে ক্যামেরা ওপেন করতে পারব। তার আগে মহরত করে অভিনয়শিল্পীদের পরিচয় করিয়ে দেব।’
‘মুক্তির ছোট গল্প’ সিনেমার নির্মাতা আব্দুস সামাদ খোকন ব্যক্তিগত ব্যস্ততার অজুহাতে কথা বলতে চাননি। শুধু জানিয়েছেন, প্রি-প্রোডাকশনের কাজ চলছে। ‘বনলতা সেন’ সিনেমার নির্মাতা ও প্রযোজক মাসুদ হাসান উজ্জ্বল জানিয়েছেন, সিনেমার শুটিং প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
শুটিং চলছে ‘বকুল কথা’ সিনেমার। পরিচালক মাসুদ মহিউদ্দীন বলেন, ‘সিনেমাটি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে। তাঁরা যেহেতু পেশাদার অভিনয়শিল্পী নয়, তাই একটু সময় লাগছে। শুটিং চলছে, আশা করি দ্রুত সিনেমাটি মুক্তির ঘোষণা দিতে পারব।’
এদিকে ‘অন্তরখোলা’ সিনেমার ৮০ শতাংশ দৃশ্য ধারণের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রযোজক সারা যাকের। তিনি বলেন, ‘অন্তরখোলা সিনেমার ৯০ শতাংশ শুটিং হবে চর অঞ্চলে। ৮০ শতাংশ সম্পূর্ণ হওয়ার পর বৃষ্টির কারণে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। আমরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। বাকি কাজ শেষ করার জন্য সময় চেয়েছি। আশা করছি এ বছর সম্পূর্ণ শেষ করতে পারব।’
শুটিং চলছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘জয় বাংলা ধ্বনি’ ও ‘ভাষার জন্য মমতাজ’-এর। খ ম খুরশীদের পরিচালনায় জয় বাংলা ধ্বনি সিনেমায় জুটি বেঁধেছেন নিরব ও রুকাইয়া জাহান চমক। সরোয়ার তমিজউদ্দিনের ভাষার জন্য মমতাজ সিনেমায় অভিনয় করছেন গাজী আব্দুন নূর ও নিপুণ আক্তার।
এ ছাড়া ‘একাত্তর-করতালে ছিন্নমাথা’, ‘যুদ্ধজীবন’, ‘অতঃপর রোকেয়া’, ‘বঙ্গবন্ধুর রেণু’ ও ‘এই তো জীবন’ সিনেমা সম্পর্কে তথ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধজীবন ও এই তো জীবন সিনেমার কাজ চলছে, বাকি সিনেমাগুলোর জন্য সময় বাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে।
মুক্তির অপেক্ষায় আরও রয়েছে ‘যাপিত জীবন’ ও ‘আহারে জীবন’ সিনেমা দুটি। যাপিত জীবন সিনেমার প্রযোজক ও পরিচালক হাবিবুল ইসলাম হাবিব। অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন, রোকেয়া প্রাচী, ভাবনা, রওনক হাসান প্রমুখ। ছটকু আহমেদের পরিচালনায় আহারে জীবন সিনেমায় অভিনয় করেছেন ফেরদৌস, পূর্ণিমা প্রমুখ।
প্রতিবছর সিনেমা নির্মাণের জন্য অনুদান দেওয়া হলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হচ্ছে না। এ বিষয়ে অনুদানের বাছাই কমিটির সদস্য চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ বলেন, ‘আমাদের কাজ গল্প পড়ে মূল্যায়ন করা। নির্ধারিত সময়ে সিনেমা নির্মাণ কেন হয় না, সে বিষয়টি মন্ত্রণালয় দেখাশোনা করে।’
তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর যাঁরা অনুদান পেয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই আমরা তত্ত্বাবধানে রেখেছি। তাঁরাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। যেসব সিনেমার কাজ শেষ হয়নি, তাঁরা চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন কেন দেরি হচ্ছে। অনেকেই সময় বাড়িয়ে নিচ্ছেন।’