হোম > ছাপা সংস্করণ

ঘিওরের ঢাকঢোলের গ্রাম মনিদাসপাড়া সরগরম

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)

দুর্গাপূজা ঘিরে মাসখানেক ধরে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার মনিদাসপাড়ায় ব্যস্ততা তুঙ্গে। মণ্ডপগুলোয় বাজবে এই পাড়ার বাসিন্দাদের তৈরি বাদ্যযন্ত্র। তাই শেষ মুহূর্তে সুরেলা শব্দে ঝালিয়ে নিচ্ছেন যন্ত্রগুলো।

উপজেলার বালিয়াখোড়া গ্রামের মনিদাসপাড়াকে সবাই চেনে ‘ঢাকঢোল পাড়া’ হিসেবে। পাড়ায় অর্ধশত পরিবারের সবাই ঢাকঢোল তৈরির করে জীবিকা নির্ভর করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন উৎসবে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে থাকেন তাঁরা। করোনাকালীন স্থবিরতা কাটিয়ে যেন নবউদ্যমে জেগে উঠেছে পাড়াটি।

সম্প্রতি মনিদাসপাড়ায় দেখা গেছে, ঢোল তৈরির পর বাড়ির উঠোনে রঙের প্রলেপ দিচ্ছিলেন মানিকচন্দ্র দাস ও চিত্তরঞ্জন দাস। পাশেই কাপড় আর সুতা দিয়ে বিড়া বানানোয় ব্যস্ত গৃহবধূ যমুনা রানী দাস। আশপাশের বাড়িগুলো থেকে আসছে ঠুংঠাং শব্দ। পাড়ার প্রায় সব পরিবারই ঢাকঢোল, ডুগি-তবলা আর কঙ্গ তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটছে।

এদিকে বাড়ির গৃহবধূরও দম ফেলার সময় নেই। ঘর গৃহস্থালি শেষ করেই তাঁরা লেগে যান কর্তাদের সঙ্গে। তাঁদের সময় কাটছে ডুগি-তবলার বিড়া বানিয়ে। পূজার মৌসুমে বিরামহীন কাজ চলে।

পাড়ার প্রবীণ ব্যক্তি কমল চন্দ্র দাস (৭০) বলেন, পূর্বপুরুষদের পেশা হিসেবে ৪ যুগেরও বেশি সময় ধরে ঢাকঢোল তৈরি করছেন তিনি। মনিদাসপাড়ায় প্রায় ৪৫টি পরিবারের দেড় শতাধিক মানুষ এই কাজে জড়িত। পাড়া থেকেই পাইকারি ও খুচরা দরে বাদ্যযন্ত্র বিক্রি করা হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাদ্যযন্ত্রের বড় শো-রুম, এমনকি বিদেশ থেকেও ফরমাশ আসে এখানে।

প্রায় ২০ বছর ধরে বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেন মানিক চন্দ্র দাস। তিনি জানান, পাড়ায় ঢাকঢোল, ডুগি, তবলা, কঙ্গ, হাত বাওয়া, নাল, খমগ ও বাচ্চাদের ঢোল তৈরি করা হয়। এসব তৈরিতে আম, নিম, কড়ই, শিমুল কাঠ ব্যবহার করেন তাঁরা। এতে পরিশ্রম বেশি, তবে লাভ খুব একটা না।

মানিক চন্দ্র জানান, একেকটি যন্ত্র তৈরি করতে ৪ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত লেগে যায়। ক্রেতারা ফরমাশ অনুযায়ী বাদ্যযন্ত্র তৈরি হয়। কাঠ ও আকার ভেদে এর দাম ভিন্ন হয়। একটি ঢাক ৩ থেকে ১২ হাজার টাকা, তবলা ২ থেকে ৫ হাজার, নাল দেড় থেকে ৩ হাজার ও হাত বাওয়া ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়ে থাকে।

গৃহবধূ যমুনা রানী দাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গৃহস্থালি শেষে যতটুকু সময় পাই, ডুগি-তবলার বিড়া তৈরিতে ব্যস্ত থাকি। পূজা এলে ব্যস্ততা বেড়ে যায় বহুগুণ।’

মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের স্নাতক (সম্মান) পড়ুয়া আকাশ চন্দ দাস পড়ালেখার পাশাপাশি বাদ্য তৈরিতে বাবাকে সহায়তা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের তৈরি বাদ্যযন্ত্র ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জায়গায় যায়। এ বছর রামপুরার বাংলাদেশ তাল তরঙ্গ ও চট্টগ্রামের সুর বীণা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমরা ঢোলের সবচেয়ে বড় অর্ডার পেয়েছি।’

বালিয়াখোড়া ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান বলেন, ‘বংশ পরম্পরায় মনিদাসপাড়ার লোকজন বাদ্যযন্ত্র তৈরি করেন। তাঁদের তৈরি বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা দেশজুড়ে। বাদ্যযন্ত্র তৈরির পাশাপাশি তাঁদের বাদ্য বাজানোর সুনামও রয়েছে।’ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো এই শিল্পটি আরও সমৃদ্ধ হবে মনে করেন তিনিসহ সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হামিদুর রহমান বলেন, ‘বালিয়াখোড়ার দাস সম্প্রদায়ের লোকজনের আর্থসামাজিক অবস্থা ঢাকঢোলেই ঘুরেছে। তাঁদের বাদ্যযন্ত্র দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই শিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা আন্তরিকতার সঙ্গে সমাধানে করা হয়।’ 

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ