করোনার কারণে গত বছর দেড়েক দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা গেছে। মূলত লকডাউনে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে অনেকে টিকতে না পেরে ব্যবসা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু করোনার এ সময়ে ওষুধ এবং অপ্রচলিত কয়েকটি পণ্যের ব্যবসায় অনেকেই রাতারাতি নিজেদের ভাগ্য বদলে ফেলেন। এর মধ্যে বহুল বিক্রীত পণ্যটির নাম মাস্ক। কিন্তু এখন করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় মাস্ক বিক্রিও ঠেকেছে তলানিতে। ফলে এর সঙ্গে সম্পৃক্তরা এখন পুঁজি হারাতে বসেছেন।
রাজধানীর মিটফোর্ড, বাবুবাজার ব্রিজের নিচে মাস্কের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বসে। ঢাকাসহ দেশের সব জেলায় যে মাস্ক সরবরাহ হয়, তার বড় অংশ যায় বাবুবাজার থেকে। বাবুবাজার ব্রিজের নিচে যে মাস্ক বিক্রি হয় ৬০ পয়সায়, সেটি ফার্মেসিতে বিক্রি হয় ৫ টাকায়। মহামারিতে প্রতিদিন সকাল ছয়টা থেকে বাবুবাজার ব্রিজের নিচে এই পাইকারি বাজারে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মাস্ক বিক্রি হতো। কিন্তু বর্তমানে পুরো বাজারে ৩০-৪০ হাজার টাকারও বিক্রি হচ্ছে না। এ নিয়ে শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা।
বাবুবাজার ব্রিজের নিচে মাস্ক ব্যবসায়ী আলামিন বলেন, করোনাকালীন প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মাস্ক বিক্রি করেছেন তিনি। বিক্রি ভালো হওয়ায় অনেকেই অন্য পেশা ছেড়ে এই পেশায় এসেছেন। কিন্তু এখন বিক্রি নেই বললেই চলে। আগে যে মাস্ক ২০ টাকায় বিক্রি হতো, তা এখন ৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১৫ টাকার মাস্ক এখন বিক্রি হচ্ছে ৬ টাকায়। ১ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তা-ও ক্রেতা আসছে না। ফলে সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।
এখানকার বেশির ভাগ মাস্ক নারায়ণগঞ্জ, কামরাঙ্গীরচর, গাজীপুর থেকে আসে। সেখানকার ব্যাগ ও জুতার কারখানাগুলোকে মাস্কের কারখানায় রূপান্তর করা হয়েছিল। এখন তারা লোকসানের সম্মুখীন। তারা আশঙ্কা করছেন, শীত মৌসুমের পর এ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।
বাবুবাজার ব্রিজের নিচে খাইরুল ইসলাম বলেন, বিক্রি না থাকায় ছোট দোকানিরা লোকসানে রয়েছেন। বিক্রি কমার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, করোনা একেবারে কমে গেছে। মানুষের মাঝে করোনাভীতি কমে গেছে। মাস্ক ব্যবহারে এখন আর আগের মতো কড়াকড়ি নেই। তাই সাধারণ মানুষ মাস্ক পরেন না।
ব্যবসায়ী হৃদয় বলেন, এই ব্যবসা করে তিনি ঋণগ্রস্ত। আগে চশমার ব্যবসা ছেড়ে মাস্কের ব্যবসায় এসেছেন। অনেক পুঁজি খাটিয়ে অনেক মাস্ক তৈরি করেছেন। সেগুলো বিক্রি না হওয়ায় ব্যবসা বদলের কথা ভাবতেও পারছেন না। অথচ ব্যবসা করতে প্রতিদিন খরচ হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।