বছরের ছয় মাস পানিতে তলিয়ে থাকা কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের হাওরাঞ্চলে এখনো চলাচল করে ‘হাওর বিলাস’। যদিও বর্ষায় নাও, হেমন্তে পাও খ্যাত একসময়ের দুর্গম অষ্টগ্রামের হাওরে এখন চলছে উন্নয়নের ছোঁয়া। হাওরের বুক চিড়ে পাকা রাস্তা বয়ে গেছে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। প্রত্যন্ত হাওরের পাকা রাস্তায় চলছে এখন অটোরিকশা (টমটম), বিভাটেক, রিকশা, চার চাকার গাড়ি। তারপরও গহিন হাওরে এখনো যোগাযোগের মাধ্যম ‘হাওর বিলাস’ নামে জানে স্থানীয় পরিবহন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০ বছর আগে দুর্গম ইউনিয়নগুলোর মানুষ শুকনো মৌসুমে যাতায়াতে গতি আনতে স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত হয় ‘হাওর বিলাস’। গরুর গাড়ির বডির সঙ্গে আধুনিক গাড়ির চাকা, পাওয়ার টিলারের বডি ও ডিজেলচালিত ইঞ্জিন দিয়ে বিশেষভাবে স্থানীয় প্রযুক্তিতে এটি তৈরি করা হয়। গাড়িতে যাত্রী বসার জন্য সারের বস্তার ভেতরে খড় দিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ বালিশ, এতে যাত্রীরা আরাম অনুভব করেন। চালকসহ ১২ থেকে ১৫ জন বসতে পারেন। কিশোরগঞ্জ থেকে অষ্টগ্রাম যোগাযোগবিচ্ছিন্ন ছিল। এক দশক আগেও এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে মানুষ যোগাযোগ করত বর্ষায় নৌকায় এবং শুকনো মৌসুমে হেঁটে। যদিও এখন ব্যাপক উন্নয়নের কারণে প্রত্যন্ত হাওরের বুকে পাকা রাস্তায় চলছে টমটম, বিভাটেক, রিকশা কোথাও চার চাকার গাড়ি। তবে গহিন হাওরে এখনো চলে ‘হাওর বিলাস’। উপজেলার খয়েরপুর-আব্দুল্লাপুর, আদমপুর ও কলমা ইউনিয়নের মানুষ পার্শ্ববর্তী মিঠামইন ও হবিগঞ্জ জেলার লাখাই, বানিয়াচং উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ, হাটবাজারের মালামাল ও কৃষিপণ্য পরিবহনে ব্যাপক ব্যবহৃত হয় হাওর বিলাস। ৯ বছর আগে হাওর বিলাসে চড়ে অষ্টগ্রাম উপজেলার খয়েরপুর-আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাপুর গ্রামে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ পরিদর্শন ও উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
সম্প্রতি আদমপুর ও খয়েরপুর-আব্দুল্লাপুর ঘুরে দেখা গেছে, কৈরাইল ফেরিঘাট ও ইছাপুর থেকে আব্দুল্লাপুর বাজার ও আদমপুর বাজার থেকে কাটা গাঙ্গ পর্যন্ত মালামাল ও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। স্বল্প ভাড়ায় চালিত স্থানীয় এই গাড়িতে বেশি চড়েন নিম্ন আয়ের মানুষ। যাত্রীরা জানান, কম টাকায় এই গাড়ি চড়ে গন্তব্যে যাওয়া যায়। বহুদিন এই গাড়িতে চড়ে তাঁরা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। তাই এখনো এই হাওর বিলাস ব্যবহার করেন।
আদমপুর ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের জাহেদা খাতুন বেগম (৪৭) বলেন, ‘বিয়ার পর থেকে শুকনা মৌসুমে বাপের বাড়ি যাইতে হাওর বিলাস লাগত। এখনো এই গাড়ি দিয়া যাই। আমরা গরিব মানুষ, টাকা কমে যাওন যায়, তাই এই গাড়িতেই উঠি।’