বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের চাহিদা ছিল কম। খুব অল্পতেই তুষ্ট ছিলেন তিনি। সিলেট অঞ্চলে তখন তাঁকে সমীহ করে মানুষ। কিন্তু তখনো দেশব্যাপী তাঁর পরিচিতি তৈরি হয়নি।
সে সময় ভোরের কাগজ পত্রিকার সিলেট অফিস তাদের ‘চলমান সিলেট’-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চেয়েছিল। পত্রিকাটির সিলেট অফিসপ্রধান ইখতিয়ার উদ্দিন ঢাকায় এলেন একটি প্রস্তাব নিয়ে। সিলেট অঞ্চলের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বাউল শাহ আবদুল করিমকে ভোরের কাগজের পক্ষ থেকে আজীবন সম্মাননা দেওয়ার প্রস্তাব দিলেন তিনি। ভোরের কাগজ কর্তৃপক্ষ সানন্দে রাজি হলো। নির্দিষ্ট দিন ১৯৯৯ সালের ২৪ জুন সিলেট অডিটোরিয়ামে ভোরের কাগজের এ অনুষ্ঠানটি হয়েছিল। ঢাকা থেকে পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বেনজির আহমেদ, ফিচার সম্পাদক সঞ্জীব চৌধুরীসহ জনা পনেরো সাংবাদিক এসেছিলেন সিলেটে। আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্ত বাউল শাহ আবদুল করিম অসুস্থ শরীর নিয়ে মঞ্চে উঠেছিলেন। গুটিকয় কথা বলে তিনি নেমে যাচ্ছিলেন মঞ্চ থেকে। কিন্তু ঢাকা থেকে আসা অতিথিরা বিশেষভাবে তাঁকে অনুরোধ করলেন একটা গান শুনিয়ে যাওয়ার জন্য। অসুস্থ শরীরেই বাউল ধরলেন ‘গাড়ি চলে না চলে না চলে না রে...’ গানটি।
সঞ্জীব চৌধুরী সে রাতেই ইখতিয়ার উদ্দিনকে অনুরোধ করলেন গানটি সংগ্রহ করে দিতে। পরদিন শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে বাউলের কাছ থেকে গানটি লিখে নিলেন তিনি, পাঠিয়ে দিলেন সঞ্জীব চৌধুরীর কাছে।
সঞ্জীব চৌধুরী বললেন, ‘শুধু কথা হলে তো চলবে না,
সুরটাও লাগবে।’
অনেক খুঁজে জাউয়াবাজারে পাওয়া গেল একটি ক্যাসেট। সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বিখ্যাত একটি বাজার এটি। এই বাজারে অডিও ক্যাসেট ব্যবসায়ীরা বাউলশিল্পীদের গান ক্যাসেট প্লেয়ারে রেকর্ড ও কপি করে বাজারজাত করে থাকেন। মূল সুর অবিকৃত রেখে বাপ্পা মজুমদার ব্যান্ডের উপযোগী করে সুরারোপ করলেন। দলছুটের দ্বিতীয় অ্যালবাম হৃদয়পুরে সেটা প্রকাশিত হলো।
গানটি ছড়িয়ে পড়ল সবার মুখে মুখে।
সূত্র: ইখতিয়ার উদ্দিন, শাহ আবদুল করিম স্মারক গ্রন্থ, পৃষ্ঠা ৬৮-৬৯