বরিশালে প্রতিমন্ত্রী ও মেয়র দুই শিবিরই ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। কদর বাড়ছে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের। দীর্ঘদিন দূরে থাকা নেতাদের ইদানীং প্রকাশ্যে নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে। গত ১৮ আগস্ট প্রশাসনের সঙ্গে মেয়রের অনুসারীদের সংঘাতের পর থেকেই নেতা–কর্মীদের নিজেদের পক্ষে নিতে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক এমপি এবং সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীরা নানা কৌশল নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিশেষ করে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের কদর এখন বেশি। এ জন্য দলীয় কর্মসূচি এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে অনেক দিন আড়ালে থাকা নেতারাও সামনের কাতারে স্থান পাচ্ছেন। হঠাৎ নতুন মুখের আবির্ভাবে নানা গুঞ্জনও দেখা দিয়েছে দলে। এ সব কিছুই আগামী সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দল গোছানোর কৌশল বলে, দাবি করেছেন নগর আওয়ামী লীগ নেতারা।
সরকারি বিএম কলেজের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মঈন তুষার ছিলেন প্রয়াত মেয়র হিরনের বড় অনুসারী। গত ৩ বছরে ছাত্রলীগ নেতা তুষার কোথাও না ভিড়লেও হঠাৎ গত শুক্রবার মেয়র সাদিকের সঙ্গে দেখা গেছে। তাঁর মেয়রকে সালাম করার কিছু ছবি ফেসবুকে ঝড় তুলছে।
ছাত্রলীগ নেতা মঈন তুষার দাবি করেছেন, ঠিকাদারি কাজের বিলের জন্য মেয়র তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে এখনো পরিষ্কার নন তিনি।
জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ছবি পোস্ট দিয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘সাদেক ভাই প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না।’ তবে বিএম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সাল আহমেদ মুন্না বলেন, বিভিন্ন দুয়ারে অনেকেই ছুটছে স্বার্থ হাসিলের জন্য।
মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তৌসিক আহমেদ রাহাত এবং বিএম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফাতেমা মমতাজ মলি সম্প্রতি মেয়র সাদিকের সঙ্গে দেখা করেছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর বিষয়ক সদস্য লস্কর নুরুল হক গত ২২ অক্টোবর রাতে সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের ৩ বছর পূর্তিতে মেয়র সাদিকের কালিবাড়ি রোডের সেরনিয়াবাত ভবনে অনুষ্ঠিত মিলাদে ছিলেন। সদ্য উপনির্বাচনে বিজয়ী ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন রুবেলও সিটি মেয়রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, সামনে সিটি নির্বাচন। তাই নেতা-কর্মীদের কদর থাকবেই। ভুল সংশোধন করে নেতা–কর্মীদের মূল্যায়ন করতে চায় দল। এমনটা হাইকমান্ডেরও নির্দেশ। রাজনৈতিক, সামাজিক কার্যক্রম নেতা–কর্মীদের অংশগ্রহণ করাচ্ছেন মেয়র। অনেক দিন পর হক ভাই এসেছেন, তুষারও মেয়রের সঙ্গে দেখা করেছে। আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে এ চেষ্টা।
প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিমের কাছেও নেতা–কর্মীদের ভিড় বাড়ছে। কদর বাড়ছে সিটি কাউন্সিলরদেরও। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে সদ্য বিজয়ী কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন রুবেল প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেন। জাহিদ হোসেন রুবেল অবশ্য বলেন, তিনি মেয়র এবং প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি নগরীর ৯ কাউন্সিলর প্রতিমন্ত্রীর বলয়ে অনেকটা সরাসরি যোগ দেওয়ায় এখন সবার দৃষ্টি ৩০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের দিকে। মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেনকেও দেখা গেছে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে।
২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব বলেন, কদর তো বাড়বেই, সামনে সিটি নির্বাচন আসছে। এখন মেয়রের অনেককেই লাগবে।
২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির বলেন, তারা ৯ জন কাউন্সিলর সিটি করপোরেশনের সাধারণ সভায় যাননি। তাঁর দাবি কাউন্সিলর রুবেলও তাঁদের পক্ষে আছেন। উল্লেখ্য ২০ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলরই প্রতিমন্ত্রীর অনুসারী।
তবে ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেন বলেন, মেয়র সাদিকের কাছে সব সময়ই নেতা–কর্মীদের কদর ছিল, এখনো আছে। অধিকাংশ কাউন্সিলরও মেয়রের নেতৃত্বে আছেন। যারা চলে গেছেন, তাঁদের দলে
অবদান কী?
শ্রমিক লীগের মহানগর সভাপতি আফতাব হোসেন বলেন, শ্রমিক লীগ একটি মহল পরিচালনা করেন, তাই জান না। মালিক ও শ্রমিকেরা দখলদারির অবসান চান। প্রতিমন্ত্রী তো দলের, তাই তার এলাকার কাউন্সিলর রুবেলকে নিয়ে তিনি প্রতিমন্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। আফতাব মনে করেন, দল ভারী করতে এখন অনেকেই ডাকবে কিন্তু যাদের মুখোশ খুলে গেছে তাদের কাছে ত্যাগীরা যাবেন না।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মীর আমিন উদ্দিন মোহন বলেন, নেতা-কর্মীদের এখন মেয়রের কাছে সমাদর বেশি। প্রতিমন্ত্রীর কাছেও আছে। দুই শিবিরেই বাড়ছে কদর।
মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আফজালুল করিম বলেন, আগামী ২ বছরের মাথায় সিটি ভোট। এখনই নির্বাচনমুখী হতে হবে। এ জন্য নতুন করে নেতা–কর্মীদের নিয়ে দল সাজানোর চেষ্টা চলছে। নগর আওয়ামী লীগে নেতা–কর্মীদের মূল্যায়ন আছে, এটা আরও বাড়বে।