চলতি বছরের ডিসেম্বরেই ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ চালু করতে চায় সরকার। সেই লক্ষ্যে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার অংশের কাজ চলছে পুরোদমে। আগামী এপ্রিল থেকে এ অংশে শুরু হবে পিচ ঢালাই। তবে বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পুরো এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হতে আগামী বছর পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকার উত্তর অংশ থেকে দক্ষিণাংশে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ২০১১ সালের এপ্রিলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তথা উড়ালসড়ক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) এ প্রকল্প ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নকশা বদল, ভূমি অধিগ্রহণ, বরাদ্দ সংকটসহ নানা জটিলতায় চারবার পিছিয়ে প্রকল্পের নতুন মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত।
শুরুতে এ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকায়। একাধিকবার মেয়াদ বাড়ার কারণে সব মিলিয়ে ৫ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা বেড়ে প্রকল্পের বর্তমান ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকায়।
সার্বিক বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সকল সমস্যা কাটিয়ে করোনার সময়েও প্রকল্পের কাজ পুরোদমে চলছে। এখন আর্থিক কোনো সমস্যা নেই। ২০২৩ সালে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তবে এই বছরের ডিসেম্বরে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলোমিটার অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য চালু করার পরিকল্পনা আছে। এ লক্ষ্যে আগামী এপ্রিল থেকে বিটুমিন বা পিচ ঢালাই শুরু হবে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে তিন ভাগে। সার্বিকভাবে প্রকল্পের অগ্রগতি এখন পর্যন্ত ৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে বিমানবন্দরের দক্ষিণ কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত প্রথম ভাগের কাজ হয়েছে ৮০ শতাংশ। দ্বিতীয় ভাগে বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৩৪ শতাংশ। তৃতীয় ভাগে মগবাজার রেলক্রসিং থেকে কুতুবখালী অংশের কাজ চলছে ধীরগতিতে। শিগগিরই এ অংশের কাজ শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন অংশে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ চলছে। কোনো স্থানে চলছে পিলার বসানোর কাজ। কোথাও পিলারের ওপর বসানো হচ্ছে আই গার্ডার। বিমানবন্দর থেকে কুড়িল পার হয়ে ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশন পর্যন্ত স্ল্যাব বসানো এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।
এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়নে কাজ করছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেড। কোম্পানির মালিকানার ৪৯ শতাংশ ব্যাংককভিত্তিক ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির কাছে। বাকি অংশের মধ্যে ৩৪ শতাংশের মালিকানা চায়না শ্যাংডং ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল করপোরেশনের (সিএসআই)। চীনের আরেক কোম্পানি সিনো হাইড্রোর রয়েছে ১৫ শতাংশ। পিপিপির আওতায় ঠিকাদারদের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়েছে ২৫ বছরের। নির্মাণকাজ শেষে সাড়ে ২১ বছর অংশীদার প্রতিষ্ঠানগুলো এক্সপ্রেসওয়ে থেকে টোল তুলবে। এরপর এর পুরো মালিকানা পাবে সরকার।
টোল এবং প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেরিতে হওয়ার কারণে প্রকল্পের যে সুবিধাটা পাওয়ার কথা ছিল, সেটা আদৌ পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। আর টোল দিয়ে যানবাহন পারাপার করাও একটা চ্যালেঞ্জ। সময়ের কাজ সময়ে করা হচ্ছে পিপিপি প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। পিপিপির আওতায় প্রকল্প করার জন্য যোগ্য নয় আমাদের দেশ। সরকারের অনেকগুলো প্রজেক্ট চলছে। কারো সঙ্গে কোনো সমন্বয় নেই। যার ফলে কোনো প্রকল্পই সময়মতো হচ্ছে না।’
এ প্রসঙ্গে সরকারের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী সুলতানা আফরোজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পিপিপি প্রকল্পে যে ধীরগতি ছিল সেগুলো আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাচ্ছে। আমূল পরিবর্তন আসছে পিপিপি প্রকল্পে। পিপিপি সম্পর্কে মানুষের ধারণা আস্তে আস্তে বদলে যাবে। এখন অনেক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে।’