মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’ মুক্তি পেয়েছিল ২৩টি হলে। দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে প্রায় দ্বিগুণ (৪১টি) হলে পৌঁছে গেছে সিনেমাটি। অন্যদিকে ঈদের তিন সিনেমার মধ্যে সবচেয়ে কম—১১ হলে মুক্তি পায় ‘পরাণ’। পঞ্চম সপ্তাহে এসেও প্রায় ৪৫টি হলে চলছে সিনেমাটি। বলা যায়, প্রায় সমান গতিতে সিনেমা দুটি ঝড় তুলেছে প্রেক্ষাগৃহে। ‘পরাণ’ সিনেমার প্রযোজক তামজিদ অতুল আশা করছেন, দেশের হলে যে দর্শক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, এতে করে সিনেমাটি আরও অনেক দিন প্রদর্শিত হবে। অতুল বলেন, ‘পরাণের টাকা দিয়ে আরও পাঁচটি সিনেমা বানানো যাবে আশা করি। এখনো সেলস বাম্পার।’
দীর্ঘদিন পরে সিনেমা হলে দর্শকের ভিড় লক্ষ করা যাচ্ছে। হলের মালিক ও প্রযোজকদের মুখে চওড়া হাসি ফুটেছে। অনেকেই মনে করছেন, বাংলা সিনেমার হাওয়া বদলে যাচ্ছে। তবে এই আশার দৌড় কত দূর? ঈদের পর থেকে ঢাকাই সিনেমায় যে আশা সঞ্চার হয়েছে, আগস্টে এসে তা অনেকটাই ম্রিয়মাণ। হলের মালিকেরাও আগস্টে মুক্তি প্রতীক্ষিত বেশিরভাগ সিনেমা নিয়ে অনেকটা হতাশ। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির অফিস সচিব সৌমেন রায় বাবু জানিয়েছেন, আগস্ট মাসে মুক্তির আবেদন করা সিনেমাগুলো হলো ‘মাফিয়া ৪’, ‘আজ একটি বিশেষ দিন’, ‘আশীর্বাদ’ ও ‘না জেনে নারায়ণগঞ্জে’। এর মধ্যে নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘আশীর্বাদ’ ছাড়া বাকি সিনেমাগুলো নিয়ে তেমন আলোচনা শোনা যাচ্ছে না। এতে অভিনয় করেছেন জিয়াউল রোশান ও মাহিয়া মাহি।
হলে দর্শকের ভিড়, আরিফ নামে একজন দর্শক তাই বেশ কষ্ট করে স্টার সিনেপ্লেক্সের টিকিট জোগাড় করেছেন। ‘হাওয়া’ সিনেমা দেখা শেষে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বছরে পাঁচটা সিনেমাও হয় না, যা সিনেমার নিয়মিত দর্শক হিসেবে দেখতে যেতে পারি। গত ঈদে শান ও গলুই দেখেছি। এই ঈদে পরাণ ও দিন দ্য ডে দেখেছি। আজ হাওয়া দেখলাম। কিন্তু এরপর কী? এমন মানসম্মত সিনেমা আবার কবে দেখতে পাব তার ঠিক নেই!’
এমন আক্ষেপ জানিয়েছেন শরীফুল সোহেল নামে আরেক দর্শক। তাঁর মতে, ‘বাংলা সিনেমা দেখার জন্য দর্শক অধীর আগ্রহে বসে থাকে। অথচ মানসম্মত সিনেমা বছরে কতগুলোই বা মুক্তি পায়! ভালো গল্পের সিনেমা বানানোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। তাহলেই অন্য ভাষার সিনেমা এ দেশে এসে টিকবে না বাংলা সিনেমার কাছে।’
হলের মালিকদেরও এমন আক্ষেপ বহুদিনের। গত দুই ঈদের সিনেমা দেখতে দর্শক যেভাবে হলে ফিরেছেন, সেটি ধরে রাখতে দরকার ভালো গল্পের সিনেমা। মধুমিতা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘নিয়মিত সিনেমা মুক্তি দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ভালো সিনেমা তো দূরের কথা, নিয়মিত কোন সিনেমা মুক্তি দেব, সেটাই আমরা জানি না। দর্শকদের হলে আনার প্র্যাকটিসটা বন্ধ হয়েছে বহু আগে। দর্শক ফেরানোর উপায় ধারাবাহিকভাবে ভালো সিনেমা মুক্তি।’
সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে বেশ কয়েকটি আলোচিত সিনেমা মুক্তির ঘোষণা এসেছে। ১৬ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাবে মানিকের ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’। মাহমুদ দিদারের বহুপ্রতীক্ষিত ‘বিউটি সার্কাস’ মুক্তি পাওয়ার কথা ২৩ সেপ্টেম্বর। একই দিনে দীপংকর দীপনের ‘অপারেশন সুন্দরবন’-এর মুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে। সাইদুল ইসলামের ‘বীরত্ব’ আসবে ৩০ সেপ্টেম্বর। এছাড়া সেপ্টেম্বরে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’।
অক্টোবরের ৭ তারিখ মুক্তি পাবে দুটি সিনেমা—মানিকের ‘যাও পাখি বল তারে’ এবং ইস্পাহানি আরিফ জাহানের ‘হৃদিতা’। অক্টোবরে আরও দুই সিনেমার মুক্তিও চূড়ান্ত। বেলাল সানির ‘ডেঞ্জারজোন’ ১০ অক্টোবর এবং ২৮ অক্টোবর আসবে সুজন বড়ুয়ার ‘বান্ধব’। মুক্তির মিছিলে আছে ‘পরাণ’ পরিচালক রায়হান রাফির নতুন সিনেমা ‘দামাল’ও। এর মধ্যেই সেনসর বোর্ডে জমা পড়েছে সিনেমাটি। শাকিব খানের ‘লিডার’ ও ‘অন্তরাত্মা’ সিনেমাগুলোও আছে মুক্তির মিছিলে।
একের পর এক সিনেমা মুক্তির ঘোষণাকে ভীষণ ইতিবাচকভাবে দেখছেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অনেকে বলছেন, বাংলা সিনেমার চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। তবে এই যাত্রা অব্যাহত রাখতে সতর্ক থাকতে হবে। পরপর ভালো সিনেমা না দিলে দর্শক আবার হলবিমুখ হতে পারে। তবে কেবল একের পর এক সিনেমা মুক্তি পেলেই হবে না, ভালো গল্প, ভালো নির্মাণের দিকে জোর দিতে বলেছেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টরা। ‘পরাণ’ ও ‘হাওয়া’র সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে ছোট পর্দার সাগর জাহান, কাজল আরেফিনসহ বেশ কয়েকজন নির্মাতা সিনেমা তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন।