ট্রাফিক জ্যামে বসে আছেন। গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। মিনিটে মিনিটে ঘড়ি দেখছেন। এই দুশ্চিন্তায় আপনার শরীর থেকে নিঃসৃত হচ্ছে অ্যাড্রিনালিন, কর্টিসল, নরএপিনেফ্রিন নামক স্ট্রেস হরমোন।
অ্যাড্রিনালিন হার্টবিট বাড়ায়, রক্তচাপ বাড়ায় এবং শক্তি সরবরাহ বৃদ্ধি করে।
কর্টিসল অন্যতম প্রধান একটি স্ট্রেস হরমোন, যা রক্তে চিনির পরিমাণ ও আমাদের মস্তিষ্কে গ্লুকোজের সরবরাহ বাড়ায়। কর্টিসল আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে। দৈহিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে ও প্রজননক্ষমতা কমিয়ে দেয়। নরএপিনেফ্রিন হার্টবিট বাড়িয়ে দেয়। সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ায়, ফ্যাট বা চর্বি ভেঙে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়ায়। শরীরের জরুরি অবস্থায় গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রতিনিয়ত এমন চাপের মধ্য দিয়ে যাওয়ার ফলে আপনার শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আমাদের প্রতিনিয়তই কিছু না কিছু শারীরিক ও মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তৎক্ষণাৎ অল্প পরিমাণে স্ট্রেস হরমোন আপনার শরীরকে জরুরি খারাপ অবস্থা থেকে রক্ষা করে, কিন্তু অনবরত এই হরমোন নিঃসৃত হলে অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। চাপের জন্য যা
হতে পারে:
হৃদ্যন্ত্রের ওপর প্রভাব
স্ট্রেস হরমোন আপনার রক্তচাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে আপনার হার্ট অ্যাটাক ও চাপের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
পরিপাকতন্ত্রের ওপর প্রভাব
স্ট্রেসের কারণে পাকস্থলী থেকে অ্যাসিড নিঃসরণ বেড়ে যেতে পারে, যা থেকে হতে পারে পেপটিক আলসার হওয়ার আশঙ্কা। চাপের কারণে আপনার বারবার পায়খানা বা পাতলা পায়খানা হতে পারে।
ডায়াবেটিস
অনবরত চাপের কারণে আপনার রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় অপারেশনের আগে অনেকের ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। অপারেশন অবশ্যই একটি স্ট্রেসফুল কন্ডিশন, সে কারণেই এটা হয়ে থাকে।
যৌন ক্ষমতা হ্রাস
অনবরত চাপের মধ্যে থাকলে পুরুষ যৌন হরমোন টেস্টোস্টেরন কমে যেতে পারে। ফলে অনেকেরই যৌন ইচ্ছা কমে যায়। যৌনশক্তি হ্রাস পায়।
অনিয়মিত মাসিক
চাপের কারণে নারীদের মাসিক অনিয়মিত হতে পারে, মাসিকের সময় রক্তপাত বেশি হতে পারে এবং মাসিক চলাকালে ব্যথা হতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে
চাপ আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিতে পারে। ফলে আপনি ঘন ঘন ঠান্ডা জ্বর বা ফ্লুতে আক্রান্ত হতে পারেন।
ব্রণ
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, স্ট্রেসের কারণে মুখে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।
স্থূলতা
চাপের কারণে যে কর্টিসল হরমোন নিঃসৃত হয়, তা পেটে মেদ জমায়। গ্রেলিন নামের আরেক প্রকারের হরমোন আপনার ক্ষুধা বাড়িয়ে ওজন বৃদ্ধি
করতে পারে।
চাপ থেকে মুক্তি পেতে
এমন কোনো একটি ওষুধের নাম
বলা যায় না যা আপনাকে পুরোপুরি
চাপ থেকে মুক্তি দেবে। তবে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনলে চাপ কমতে পারে।
প্রতিযোগিতাপূর্ণ সমাজে নানা চাপের বিপরীতে আমাদের শরীর থেকে নানা রকম হরমোন নিঃসৃত হয়, যা চেষ্টা করে আমাদের শরীরকে স্বাভাবিক রাখতে এবং একই সঙ্গে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। নির্ভার থাকতে বাগান করা, বই পড়া, ছবি আঁকার মতো শখকে প্রাধান্য দিন।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
যখন আপনার চাপ বেড়েই চলছে কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, তখন চিকিৎসক এর কারণ খুঁজে বের
করবেন। যদি বুকে ব্যথা হয়, শ্বাসকষ্ট হয়, পিঠে ব্যথা হয়, অতিরিক্ত ঘাম হয়, মাথা ঘোরে, বমি বমি ভাব হয়, তখন দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
চাপের লক্ষণ
লেখক: হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা