না, লালন শাহর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। নিজের সাধনায় তিনি হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মীয় শাস্ত্রে গভীর জ্ঞান লাভ করেছিলেন। তাঁর জন্ম ঝিনাইদহের হরিশপুর গ্রামে, নাকি কুষ্টিয়ায় কুমারখালীর ভাঁড়রা গ্রামে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। যৌবনকালে তীর্থভ্রমণে বের হওয়ার পর বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন বলে কথিত আছে। সে সময় সিরাজ সাঁই নামে এক মুসলমান ফকির তাঁকে শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলেন।
১৭৭২ সালে লালনের জন্ম। বলা হয় বাংলা ১১৭৯ সালের ১ কার্তিক তিনি জন্মেছিলেন। লালনের গানের সংখ্যা দুই সহস্রাধিক। ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’ গানটি সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির ওপর এক মস্ত চড়। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ই তাঁর গানের মধ্যে নিজের প্রাণের স্পর্শ পান। ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ কিংবা ‘বাড়ির কাছে আরশি নগর’ গানগুলোর যে জনপ্রিয়তা, সেটাই প্রমাণ করে লালন শাহ বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে কত নিবিড়ভাবে যুক্ত।
লালন বহু তীর্থভ্রমণ করেছেন। ছেঁউড়িয়ার সঙ্গে ছিল তাঁর প্রাণের সম্পর্ক। সিরাজ সাঁইয়ের কাছেই বাউল ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন লালন। সুস্থ হওয়ার পর ছেঁউড়িয়াতেই আখড়া গড়ে তোলেন। সেখানেই স্ত্রী ও শিষ্যদের নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। লালনের কোনো সন্তান ছিল না। ছেঁউড়িয়ার আখড়ায় বসে তিনি আজীবন সংগীতচর্চা করেছেন।
কুষ্টিয়ার কাঙাল হরিনাথ লালনের প্রিয় শিষ্য ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে অবস্থানকালে লালনের ২৯৮টি গান সংগ্রহ করেছিলেন। এর মধ্যে ২০টি গান প্রকাশ করেছিলেন প্রবাসী পত্রিকায়।
লালনের মৃত্যু হয় ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর। সেটা ছিল ১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১ কার্তিক। লালনের মাজারে প্রতিবছর দোলপূর্ণিমার সময় এবং লালনের মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর ভক্তরা মাজারে সমবেত হন এবং সাধু সেবা ও সংগীতের মাধ্যমে গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
লালন যে গানগুলো লিখেছিলেন, তার কোনো পাণ্ডুলিপির খোঁজ পাওয়া যায়নি। শিষ্যরা গানগুলো মনে রেখেছিলেন এবং তাঁদেরই কেউ কেউ সেগুলো সংগ্রহ ও সংকলিত করেছিলেন।