প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের তিনটি ‘কৃষি আইনের’ বিরোধিতা করে গত বছরের ২৬ নভেম্বর থেকে দিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থান নিতে শুরু করেন কৃষকেরা। কৃষকপ্রধান পাঞ্জাব ও উত্তর প্রদেশের কৃষকেরা বেশি হলেও এতে দিল্লির পার্শ্ববর্তী হরিয়ানা ও বিভিন্ন রাজ্যের কৃষক, কৃষক নেতা ও সাধারণ মানুষ যোগ দেন।
তাঁবু খেটে বৃষ্টি-বাদল, শীত উপেক্ষা করে মাসের পর মাস ‘সত্যাগ্রহ’ চালিয়ে গেছেন কৃষকেরা। এ জন্য তাঁদের মূল্যও দিতে হয়েছে। হারাতে হয়েছে ৭০০ জনের বেশি আন্দোলনকারীকে। তা ছাড়া, গত মাসের শুরুর দিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে আশিস মিশ্রের গাড়িচাপায় আটজন সত্যাগ্রহী নিহত হয়েছেন।
১৯৪৭ সালের পর তথা ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর ভারতের ইতিহাসে এটি দীর্ঘতম কৃষক আন্দোলন। গত শুক্রবার শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের জন্মদিন উপলক্ষে আইন তিনটি বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু এ ঘোষণা দিতে মোদির প্রায় এক বছর সময় লাগল কেন, তা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ হচ্ছে।
বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়, কৌশলগত ও রাজনৈতিক কারণেই বিলম্বে হলেও এ আইনগুলো বাতিল করা হয়েছে। তা ছাড়া, কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা না করে, বিভিন্ন দিক না ভেবে করায় তা বাতিল করতে মোদি বাধ্য হয়েছেন বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবিসির বিশ্লেষক সৌতিক বিশ্বাস লেখেন, বিজেপির সাম্প্রতিক বৈঠকগুলোয় কৃষক আন্দোলন নিয়ে বারবার আলোচনা হয়েছে। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা শিখদের খেপানো ঠিক হবে না বলে মত দিয়েছেন পার্টির কয়েকজন সদস্য। শিখদের বিরক্ত করে লাভ হবে না বলে অক্টোবরে মন্তব্য করেছিলেন বিজেপির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মেঘালয়ের বর্তমান গভর্নর সত্যপাল মালিক।
এর কারণ হচ্ছে, সংখ্যায় কম হলেও শিখরা ভারতের রাজনীতিতে বা নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। ভূরাজনৈতিক কারণে পাঞ্জাবের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এবং গুরু নানকের মতো ধর্মগুরু থাকায় এমনটি হয়ে থাকে। রাজ্যটির আকাশে সম্প্রতি অনেকগুলো ড্রোন (মানুষবিহীন বিমান) শনাক্ত হয়েছে, ধরা পড়েছে অস্ত্রের চালান। অর্থাৎ নিরাপত্তার কারণে পাঞ্জাব এবং শিখরা ভারতে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয় বিশ্লেষণ হচ্ছে, নির্বাচনের চাল হিসেবে এসব কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের বিধানসভা নির্বাচন। এ অবস্থায় কৃষক অধ্যুষিত এসব রাজ্যে জয় পেতে এমনটি না করে উপায় ছিল না বিজেপির।
দিল্লিভিত্তিক ‘সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ’-এর গবেষক রাহুল ভার্মা বিবিসিকে বলেন, ‘যে পদক্ষেপ আপনার জন্য অনুকূল কিছু করছে না; বরং বিরোধীদের জন্য সুযোগ তৈরি করছে, তা বাদ দেওয়া উচিত। কৃষক আইন প্রত্যাহারও অনেকটা সে কারণে করা হয়েছে।’