কত বিচিত্র ঘটনা যে দেশে প্রতিদিন ঘটে, তার সব আমরা জানতে পারি না। একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ছে, সংসারের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে লাখো মানুষ। ভাতের বদলে রুটি খাবে, সে উপায়ও নেই, আটার দাম বাড়ছে। বেশি করে আলু খেয়ে ভাত-রুটির ওপর চাপ কমানোরও জো নেই, আলুর দামও নাগালের বাইরে। মানুষের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। অন্যদিকে একশ্রেণির মানুষ ক্ষমতার দাপট দেখাতে ব্যস্ত। যিনি কোনো পদে আছেন, তিনিই শুধু ক্ষমতাবান নন, তাঁর স্ত্রী-পুত্র-কন্যাও কম যান না। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর পড়ে কত কথাই না মনে হচ্ছে। ঘটনাটি হলো:
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে জুতা দিয়ে পিটিয়েছেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির স্ত্রী। প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, গত বুধবার তিনি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছিলেন। এর মধ্যে বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের সভাপতি মামদুদুর রহমান রিপনের স্ত্রী জান্নাতুল মাওয়া লিজা স্কুলে আসেন। তিনি ‘কথা আছে’ বলে শ্রেণিকক্ষ থেকে অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত কয়েকজন শিক্ষক, অভিভাবক ও কর্মচারীর সামনেই প্রধান শিক্ষককে তাঁর নামে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠতে পারে বলে হুমকি দিয়ে তাঁকে বদলি হয়ে অন্য বিদ্যালয়ে চলে যেতে বলেন। মৌখিক হুমকির পর সভাপতির স্ত্রী নিজের পা থেকে জুতা খুলে প্রধান শিক্ষককে মেরে তারপর স্কুল থেকে চলে যান।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কেন নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠবে, তিনি বদলি হয়ে অন্য জায়গায় চলে গেলে অভিযোগ থেকে কেন রেহাই পাবেন, তার কোনো ব্যাখ্যা সভাপতির স্ত্রী দেননি। কোন অধিকার বা ক্ষমতাবলে তিনি প্রধান শিক্ষককে জুতাপেটা করার দুঃসাহস দেখালেন?
বিদ্যালয়ের সভাপতি মামদুদুর রহমান রিপন মনে করেন, জুতা দিয়ে পেটানোর ঘটনাটি ছিল ‘একটি মিস্টেক ঘটনা’। মিস্টেক হয়ে থাকলে তো তাঁর স্ত্রীর ওই প্রধান শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। মীমাংসা হলো কীভাবে? প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যদি ন্যায়সংগত কোনো অভিযোগ থাকেও তাহলে কি স্কুল কমিটির স্ত্রী তাঁকে জুতাপেটা করতে পারেন? এমনকি সভাপতিও শিক্ষকের গায়ে হাত তুলতে পারেন না।
কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সুজন ঘটনাটি জানার পর দুপুরে বিদ্যালয়ে গিয়েও মিটমাট করে দেননি। কারণ, তিনি মনে করেন, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক নয়। শিক্ষককে মারধর করার ঘটনা খুবই দুঃখজনক।
উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলে নূর নান্নুও ঘটনাটি নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও ইউএনওর কাছে অভিযোগ করার কথা জানিয়ে বলেছেন, শিক্ষকদের যে যার মতো মারধর বা অপমান করবে, এটা ঠিক নয়।
আমরা দেখতে চাই বেঠিক কাজের জন্য অভিযুক্ত নারীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।