ডিমেনশিয়া একধরনের বার্ধক্যজনিত স্নায়বিক রোগ। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে। ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে পরিচিত ধরন আলঝেইমার। এ রোগে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার পাশাপাশি চিন্তা করার ক্ষমতা কমে যায় এবং ব্যক্তিত্ব ও মেজাজে পরিবর্তন আসে।
৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্য়ে প্রতি ১ হাজার জনে ৫ জনের এ রোগ হতে পারে। মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের অবক্ষয় ও অ্যামাইলয়েড জাতীয় প্রোটিনের উপস্থিতির কারণে আলঝেইমার রোগ হয় বলে ধারণা করা হয়।
এ রোগের কোনো প্রতিকার নেই। তবে দৈনন্দিন জীবনযাপনের কিছু পরিবর্তনের মাধ্য়মে এর লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
- ব্যায়াম
প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা বা ঘাম ঝরিয়ে হাঁটলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
- খাদ্যাভ্যাস
খাদ্যাভ্যাসের কিছু পরিবর্তনে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করা যায়। শাকসবজি, ফলমূল, শস্যদানা, অলিভ অয়েল, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি খাবার ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে কার্যকরী। পাশাপাশি এড়িয়ে যেতে হবে গরু, ভেড়া বা ছাগলের মাংস।
- প্রশান্তির পরিবেশ তৈরি
ডিমেনশিয়ার ফলে সৃষ্ট মানসিক বিভ্রান্তির জন্য আক্রান্ত ব্যক্তি যাতে বিপর্যস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘরের প্রতিটি জিনিস যেখানে থাকে, সেখানেই রাখতে হবে। ঘুমানোর জায়গা করতে হবে শান্তিপূর্ণ। বাড়িতে সব সময় প্রশান্তিময় পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির কাজ ও আচরণের সমালোচনা না করে তার প্রশংসা ও কাজে উৎসাহ দিতে হবে।
- নিরাপত্তা বজায় রাখা
আলঝেইমারে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাইরে একা না পাঠানোই ভালো। যদিও বাইরে যায়, তাহলে তার সঙ্গে নাম, ঠিকানাসহ একটি কার্ড রাখতে হবে। ছুরি, কাঁচি, বঁটি ইত্যাদি রোগীর নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
- স্মরণশক্তি বাড়াতে মেমোরি এইডের ব্যবহার
প্রয়োজনে সবকিছু চিহ্নিত করে রাখতে হবে, যাতে রোগীর জন্য সব চিনতে পারা সহজ হয়। প্রয়োজনীয় জিনিস, যেমন গুরুত্বপূর্ণ ফোন নম্বর তালিকাবদ্ধ করে রাখতে হবে।
- দৈনন্দিন রুটিন তৈরি
দিনের একটি রুটিন বানাতে হবে, যা আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য মেনে চলা সহজ হবে। একসঙ্গে অনেক কাজ না করে যাতে একটি কাজই ধীরে ধীরে করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আলঝেইমার দিবস। ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে পরিচিত ধরন আলঝেইমারের সাধারণ লক্ষণ এবং এর সঙ্গে যুক্ত ঝুঁকির কারণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা দিবসটির লক্ষ্য। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষদের প্রতি খেয়াল রাখুন। তাঁদের সুস্থ রাখুন।
লেখক: ডা. সোমাইয়া নাওশিন আহমেদ,সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগ বিভাগ, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল