এক সময়ের খরস্রোতা খীরু নদী এখন মৃতপ্রায়। কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে নদীর পানি কালচে বিবর্ণ রং ধারণ করেছে। দখল-দূষণে অস্তিত্ব হারাতে বসলেও আগের রূপ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নদী সংকুচিত হয়ে খালের মতো হয়ে গেছে। প্রমত্তা নদীতে এখন হাঁটুপানি। কোথাও কোথাও তাও নেই। সেই পানিতে ভাসছে বিভিন্ন আবর্জনা। নদীর দুই পাশ দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ভবন।
নদীপাড়ের বাসিন্দা কৃষক আফতাব উদ্দিন জানান, নদীতে এক সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। জেলেরা নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে তাঁদের সংসার চালাতেন। এখন আর জাল ফেলার উপায় নেই। যাঁরা এই নদীর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন, তাঁরা এখন বেকার। অনেকেই আবার মাছ ধরা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। এখন নদীর তীরেই যাওয়া যায় না। মিল-কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানি নদীতে মিশে তা কালো রং ধারণ করছে। এ বিষাক্ত পানির দুর্গন্ধে বাড়িতে থাকাই কঠিন। গরু, ছাগল, পশু-পাখি নদীর পানি পান করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। নদী থেকে ফসলের খেতে সেচ দেওয়া হতো। এখন এই পানি দিলে ধান মরে যায়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন ভালুকা আঞ্চলিক শাখার সদস্যসচিব কামরুল হাসান পাঠান কামাল বলেন, ‘মিল-কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানি নদীতে প্রবাহিত হওয়ায় পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। বিষাক্ত এ পানি পান করে গরু, ছাগল, হাঁসসহ পশু-পাখি মারা যাচ্ছে। দুর্গন্ধে নদীর তীরে হাঁটা দুষ্কর। নদীর পানি সেচ দিয়ে কৃষক ফসল উৎপাদন করে থাকে। এ পানি এখন সেচ কাজে ব্যবহার হয় না। মিল-কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি বিষাক্ত। এ দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে কার্বন ডাইন অক্সাইড বাতাসে মিশে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এতে নানা রোগ বালাই সৃষ্টি হয়েছে। নদীতে বালু উত্তোলন করে প্লাবন ভূমি দখল করছে। এতে নদীর নাব্য হ্রাস পাচ্ছে। নদীর দুই পাড়ের অনেক জায়গা দখল হয়ে গেছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জেসমিন জাহান বলেন, ‘কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানিতে অ্যালুমিনিয়াম বেশি থাকে। এ পানি ব্যবহার করলে ধানগাছ অতি দ্রুত বেড়ে যায় এবং ধানে পাতা মরে ফলন নষ্ট করে। এ পানিতে কেমিক্যাল ও ধাতব পদার্থ থাকে যা ধান গাছের সঙ্গে মিশে যায়। সেই ধানের ভাত খেলে মানবদেহে ক্ষতি হয়।’
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম পিন্টু বলেন, ‘বর্জ্য মিশ্রিত পানিতে খীরু নদী বিপর্যস্ত। নদীতে বর্জ্য মিশ্রিত পানি ফেলা বন্ধ করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থভাবে বাঁচানোর জন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’
ইউএনও সালমা খাতুন বলেন, ‘খীরু নদীর বিষাক্ত বর্জ্য মিশ্রিত পানি পরিবেশ দূষণ করছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’