চট্টগ্রামের পটিয়ার শ্রীমতি খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা ছিল বিপাকে। বাঁশের সাঁকোই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। প্রতিবছর বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে টেনে নিয়ে যেত সাঁকো। আবার নতুন সাঁকো নির্মাণ করতেন তাঁরা।
বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ধরনা দিয়েও কোনো সহায়তায় পাননি। অবশেষে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তা ও একটি শিল্প গ্রুপের অনুদানে শ্রীমতি খালের ওপর নির্মাণ করা হয় ১১১ ফুট দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৫ ফুট প্রস্থের একটি সেতু। নাম দেওয়া হয় করল-ভাটিখাইন সেতু। এতে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পায় স্থানীয় বাসিন্দারা। খুশি হয় তারা।
জানা যায়, চলতি বছরের মার্চে শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ। শেষ হয়েছে ১০ অক্টোবর।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শ্রীমতি খালের এক পাশে করল গ্রাম। অন্যপাশে ভাটিখাইন গ্রাম, পশ্চিমে ছনহরা ইউনিয়ন। আগে খালের দুই পাড়ের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল বাঁশের সাঁকো। শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যেত এ সাঁকো পার হয়ে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে বাঁশের সাঁকোটি তলিয়ে অথবা ভেঙে যেত। তখন বিপাকে পড়ত তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা লিয়াকত আলী বলেন, গ্রামে কেউ মারা গেলে কবরস্থানে খাটিয়া নিয়ে যেতে হতো সাঁকো দিয়ে। অনেক সময় খালে নেমে খাটিয়া পার করতে হতো।
ভাটিখাইন করল জামে মসজিদ সেতু প্রকল্পের যুগ্ম সম্পাদক এ এইচ এম কাউছার বলেন, ‘২০ বছর ধরে শ্রীমতি খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য সবার কাছে ধরনা দিয়েছি। সবাই শুধু আশ্বাস দিয়েছে। কেউ সহায়তা করেনি। তবে গত বছর একটি শিল্প গ্রুপের চেয়ারম্যানের পিএসের কাছে সেতু নির্মাণের জন্য বলা হয়। তিনি পরিদর্শনে এসে ১৫ লাখ টাকা অনুদান দেন। সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পরে স্থানীয় বাসিন্দারা ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সহায়তা করেন।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেলিম নবী বলেন, অবহেলিত ভাটিখাইন ও করল গ্রামের মানুষ সরকারি বরাদ্দকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সেতু নির্মাণ করেছেন। সরকারি মহলের বিমাতাসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে এ সেতু দুই গ্রামের মানুষের সময়োচিত জবাব।
ভাটিখাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বখতিয়ার বলেন, এ সেতু নির্মাণ করায় দুই গ্রামের মানুষ উচ্ছ্বসিত। দীর্ঘদিনের দুভোগ লাঘব হয়েছে। ভবিষ্যতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কেন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিষদের বরাদ্দগুলো ছোট। সেতু নির্মাণের মতো বরাদ্দ ছিল না। তবে আমি সার্বিক সহযোগিতা করব।’