ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় সুনামগঞ্জের সুরমাসহ সীমান্ত নদী জাদুকাটায় পানি বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, গত এক সপ্তাহে জাদুকাটা নদীর পানি সাত ফুট বেড়েছে। এতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকেরা। নদীতে পানি বাড়লে তা ফসলরক্ষা বাঁধ উপচে হাওরে প্রবেশ করে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে।
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তাহিরপুর উপজেলার জাদুকাটা, বৌলাই ও পাঠলাই নদীর পানি বেড়েছে। এতে উপজেলার সর্ববৃহৎ শনি, মাটিয়ান ও মহালিয়াসহ ছোট-বড় ২৪টি হাওরপাড়ের কৃষক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কৃষকেরা বলছেন, এভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে হাওরের ধান ঘরে তোলা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
সদর উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামের সুমন দাস বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টি ফসলের জন্য উপকার। তবে এখন যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তাতে ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
গত বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় সম্মেলন কক্ষে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র দপ্তর এবং দুর্যোগবিষয়ক আঞ্চলিক সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্ট (সিআইএমওডি) এর যৌথ উদ্যোগে এক সভা হয়।
সভায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বলেন, আগামী চার দিন সুনামগঞ্জে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যার শঙ্কা নেই।
এ সময় বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকার পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূইয়া সুনামগঞ্জের আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সুনামগঞ্জে ভারী থেকে মাঝারি আকারে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই সময়ে যদি ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত অতিক্রম করে, তাহলে নদীর পানি বাড়তে পারে। এতে ছোট আকারে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তবে এ অনুপাতের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হলে বন্যার আশঙ্কা নেই।
ইতিমধ্যে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বন্যা সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয় আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম ও মেঘালয় প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীতে পানি সামান্য বাড়তে পারে।
শঙ্কা প্রকাশ করে তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের গুরমার হাওরপাড়ের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নদীর পানি বাড়ায় গুরমার হাওরের একটি বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। দ্রুত বাঁশ, বস্তা ও বাঁশের চাটাই দিয়ে মেরামত করা না হলে বাঁধ ধসে যাবে।’
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও হাওররক্ষা বাঁধ মনিটরিং কমিটির সভাপতি মো. রায়হান কবির বলেন, ‘সবক’টি হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। যে বাঁধগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে, তা আবার মজবুত করা হচ্ছে। এখন আবহাওয়া অনুকূল থাকলেই কৃষকেরা নিশ্চিন্তে ধান ঘরে তুলতে পারবেন।’
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ১৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বৃষ্টির পানি সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদী দিয়ে প্রবাহিত হবে। তবে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না।