নাঙ্গলকোট উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নে ২০০ বছর ধরে শীতকালে ঠান্ডাকালি মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার এ মেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল। মেলায় হৈ-হুল্লোড়ে আনন্দে মেতে উঠার কথা ছিল শিশুদের। কিন্তু সেই আনন্দে ভাসা হলো না শিশুদের। উল্টো তাদের পোড়া ক্ষতের আর্তনাদে ভারী হলো পরিবেশ।
গত বৃহস্পতিবার উপজেলার বিরুলি গ্রামে বেলুন ফোলানোর সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ১০ শিশুসহ ৩০ জন আহত হয়। এঁদের বেশির ভাগের অবস্থাই ভালো নয়। শরীরের পোড়া চামড়ার যন্ত্রণায় কাতর হয়েছে আর্তনাদ করছে শিশুরা। এতে হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে গেছে।
মো. আবির হোসেন নাসিম ও সাকিব হোসেন দুজন খালাতো ভাই। মেলায় যাওয়ার জন্য মায়ের সঙ্গে এসেছিল নাঙ্গলকোটের নানার বাড়িতে। গত বৃহস্পতিবার মেলার প্রস্তুতি দেখতে তারা মামা আবদুর রউফের সঙ্গে বের হয়। পাশেই মেলা উপলক্ষে বেলুনে গ্যাস ভরা হচ্ছিল। তারাও অন্যান্যদের সঙ্গে জড়ো হয়েছিলেন গ্যাস সিলিন্ডার থেকে বেলুন ফোলানো দেখতে। রঙিন বেলুন ছুঁয়ে দেখার বায়না যখন মামার কাছে করছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে বিস্ফোরণ তাঁদের ছিটকে ফেলে দেয়। গুরুতর আহত হয় তারা তিনজন। বর্তমানে তারা হাসপাতালের শয্যায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
আহত শিশু আবির হোসেনের মা মাজেদা বেগম বলেন, ‘শিশুদের আনন্দ দিতে আমি ও আমার বোন শাহজাদী বেগম গত বৃহস্পতিবার সকালে ঠান্ডাকালি মেলায় যাওয়ার জন্য বাবার বাড়িতে যাই। শিশুদের আনন্দের পরিবর্তে আজ তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমার ও বোনের ছেলে এবং ভাইয়ের অবস্থা ভালো নয়। আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছি না। উন্নত চিকিৎসার জন্য আমি সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি।’
আহত আরেক শিশু নাজমুন নাহার পাখির মামা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে আমার ভাগনিকে শনাক্ত করতে পারছিলাম না। তার পুরো শরীর পুড়ে কালো হয়ে গেছে। স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর আমার বোন বাসাবাড়ির কাজ করে সংসার চালাতেন। আমরা তার চিকিৎসাসেবা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি।’
স্বজনদের সঙ্গে গতকাল কথা বলে জানা গেছে, পারিবারিকভাবে তাঁদের অনেকেই তেমন একটা সচ্ছল নন। উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব না। আহত শিশুদের অনেকের অভিভাবকেরা কেউ দিনমজুর, কৃষক কিংবা রিকশাচালক। এ ছাড়া বেলুন বিক্রেতার পরিবারের ছয় সদস্যও এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।