গাজীপুর কালীগঞ্জের বক্তারপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামে জীবনের শেষদিকে আস্তানা গেড়েছিলেন ঈশা খাঁ। বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী জমিদার ঈশা খাঁ ১৫৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এখানেই মারা যান। পরে তাঁকে বক্তারপুরেই সমাহিত করা হয়। ইতিহাসের এ মহাবীরের কবরটিকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে সমাধিস্থল। তবে এ অঞ্চলের বেহাল যোগাযোগব্যবস্থার কারণে এটি পর্যটনকেন্দ্র হয়ে ওঠায় বাদ সাধতে পারে।
জানা যায়, বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ৩০-৩৫ বছর আগে বক্তারপুরের পুরোনো দিঘির পশ্চিম পাড়ে থাকা কবরটি ঈশা খাঁর সমাধি বলে চিহ্নিত করে। চিহ্নিত হওয়ার পর স্থানীয়রা কবরটিকে বেড়া দিয়ে রক্ষা করার চেষ্টা করেন। পরে ২০০৪ সালে উপজেলা প্রশাসন বেড়ার জায়গায় দেয়াল তুলে স্থানটি চিহ্নিত করে রাখে। এখন ইটের দেয়াল তুলে তাতে সমাধি নির্মাণ করা হচ্ছে।
অনিন্দ্য নকশায়, লাল সিরামিকের ইট দিয়ে গাঁথা দেয়ালের কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে। প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সমাধিস্থলটি কালীগঞ্জ ভ্রমণপিপাসুদের কাছে পরিচিত হবে। সেই সঙ্গে মহাবীর ঈশা খাঁ সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে। এটি ইতিমধ্যে দর্শনার্থীদের আগ্রহে পরিণত হয়েছে।
পর্যটনের জন্য যোগাযোগব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না হলে পর্যটনকেন্দ্রের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ঈশা খাঁর সমাধি ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের শঙ্কা তেমনই। বক্তারপুর গ্রামে যেতে হলে প্রধান সড়ক থেকে কয়েকটি শাখা সড়ক দিয়ে যেতে হয়। প্রায় প্রতিটি শাখা সড়কই বেহাল।
সরেজমিনে দেখা যায়, বক্তারপুর বাজার থেকে মোল্লাবাড়ি পর্যন্ত প্রধান সড়ক পাকা হলেও বাকি অংশটুকু ইটের সলিংয়ের, যাতে শ্যাওলা ধরার পাশাপাশি খানাখন্দ রয়েছে অনেক জায়গায়। বহু পুরোনো একটি কালভার্ট রয়েছে যা প্রায় ভঙ্গুর। সাধারণ চলাচলের জন্য প্রযোজ্য হলেও তা বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।
বক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতিকুর রহমান ফারুক বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে এই সড়কটি করা হয়েছে মাত্র দুই তিন মাস হলো। যেহেতু এখানে সমাধির কাজ চলমান তাই ইট, বালু এবং সিমেন্ট বহনকারী ভারী ট্রাক চলাচল করছে। যে কারণে সড়কে থাকা ইট খসে যাচ্ছে। যেহেতু এটি মাত্র দুই মাস আগে নির্মিত তাই এখন কিছুই করা যাচ্ছে না। কিছুদিন গেলে একটা ব্যবস্থা করব।’
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শিবলী সাদিক বলেন, ‘ইতিহাস সংবলিত এ জায়গা যখন পুরোপুরি জানাজানি হবে তখন এখানে মানুষের উপচেপড়া ভিড় থাকবে। এই সড়কটিতে এক বছর আগে ইট বসানো হয়। এর আগে এটি মাটির কাঁচা সড়ক ছিল। আশা করছি সামনের অর্থবছরে এর কাজ হয়ে যাবে।’