একুশে ফেব্রুয়ারির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ছাত্রনেতারা। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষেই ছিল তাঁদের অধিকাংশের মতামত। সেদিন খুব ভোরে মোহাম্মদ সুলতান চলে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকার কয়েকটি স্কুলে তিনি চিরকুট পাঠিয়েছিলেন যেন তারা চলে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভায়। তিনি ছিলেন তাঁদের শিক্ষক। পড়াতেন। ছাত্ররাও চলে এসেছিল সেই সভায়।
এরপর সেই ঐতিহাসিক সভা। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের বিপক্ষে বললেন শামসুল হক। পক্ষে বললেন আবদুল মতিন। সভাপতির ভাষণে গাজীউল হকও ১৪৪ ধারা ভঙ্গের কথা বললেন। এরপর একের পর এক দশজনি মিছিল বের হতে থাকল। পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করতে লাগল, কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে থাকল। গ্রেপ্তার হলেন অনেক ছাত্র। মোহাম্মদ সুলতান দশজনি মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের নাম লিখে নিচ্ছিলেন। কিন্তু একসময় এত বেশি ছাত্র-ছাত্রী বের হতে থাকল যে হিসাব রাখা কঠিন হয়ে পড়ল। কোথায় উড়ে গেল কলম, কোথায় উড়ে গেল খাতা!
দুপুর সাড়ে ১২টার দিক থেকেই মিছিলকারীরা মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসের গেটে জড়ো হতে থাকেন। পুলিশ লাঠিপেটা অব্যাহত রাখে। তিনটার দিকে গুলি হয়। মারা যান রফিক, বরকত, জব্বার। সেই বিভীষিকার মধ্যে কীভাবে আন্দোলন এগিয়ে যাবে, তা নিয়ে যাঁরা ভাবেন, তাঁদের একজন মোহাম্মদ সুলতান। সে রাতেই মেডিকেল হোস্টেলে হলো ছাত্রদের সভা।
২২ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ সুলতান ঢাকার রেলওয়ে লোকোশেডে ধর্মঘট সফল করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। সেদিন একটি গাড়িও ঢাকা ছেড়ে যায়নি। একটা বাসও চলাচল করেনি ঢাকার রাস্তায়। একটা রিকশাও চলেনি। সেদিন সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষে উত্তোলিত হলো কালো পতাকা। যে তিনজন সেই পতাকা উড়িয়েছিলেন, তাঁদের একজন হলেন মোহাম্মদ সুলতান। অন্য দুজন হলেন হাসান হাফিজুর রহমান ও মুর্তজা বশীর।
মোহাম্মদ সুলতান বামপন্থী রাজনীতি করতেন। পুঁথিপত্র নামে একটি বইয়ের দোকান ছিল তাঁর। সেই পুঁথিপত্র থেকেই ১৯৫৩ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত হয়েছিল হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারী’। মোহাম্মদ সুলতান ছিলেন তার প্রকাশক।
সূত্র: মোহাম্মদ সুলতান, একুশের সংকলন ৮০, স্মৃতিচারণা, পৃষ্ঠা ৮৪-৮৬