অসময়ের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত মেহেরপুরের জনজীবন। একান্ত কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতে দেখা যায়নি কাউকে। গতকাল শুকবার সকাল থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, বৃষ্টির আবারও শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে। এদিকে বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে পানি জমেছে। এতে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক।
মেহেরপুর শহরের হঠাৎপাড়ার খলিল মিয়া প্রতিদিন সকালে রিকশা নিয়ে বের হন। গতকালও ছাতা ও আনুষঙ্গিক জিনিস পরে বের হন রাস্তায়। কিন্তু বাজার এক প্রকার ফাঁকা ছিল। মাঝেমধ্যে কয়েকজন যাত্রী পেয়েছেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে রিকশা চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাঁকে। এরপরও দুপুর পর্যন্ত রিকশা চালিয়েছেন।
রিকশাচালক খলিল বলেন, ‘সাধারণত মাঘ মাসের এ সময়ে এমন বৃষ্টি খুব কম সময়ই দেখেছি। আসলে এ বছরের আবহাওয়াটাও একটু জানি কেমন। প্রতি সপ্তাহে বৃষ্টি থাকছে। কখনো শীত আবার কখন মনে হচ্ছে, শীত বিদায় নিচ্ছে। আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে যেমন কষ্ট হচ্ছে, তেমনি সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
বড় বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী মহির উদ্দীন বলেন, ‘শুক্রবার বেশি বেচাকেনা হবে, এমনটিই আশা করেছিলাম। কারণ এদিন সরকারি চাকরিজীবীরা বাজার করতে আসেন। লাভও মোটামুটি ভালোই হয়। বৃষ্টি ও শীত উপেক্ষা করে ভোরেই বাজারে চলে এসেছিলাম। কিন্তু বাজারে ক্রেতা কম। ফলে বিক্রি তেমন একটা হয়নি।’
বৃষ্টিতে মাঠের ফসলেও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ জমি থেমে থেকে অনেক কৃষকই আলু তুলতে পারেনি। আলুর জমিতে পানি জমি থাকলে পচন ধরার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়াও পেঁয়াজ, গম, মসুরি, সরিষা, ভুট্টা, আগাম রসুন, বীজের জন্য তৈরি লাল শাকও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অন্যদিকে বোরো আবাদের জন্য কিছুটা উপকার হবে। কারণ জমিতে এ সময়ে সেচ দিতে হয় কৃষকদের। বৃষ্টির কারণে আর তাঁদের সেচ দিতে হবে না। জমি তৈরি করেই বোরোর চারা রোপণ করতে পারবেন।
সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের কৃষক লাবলু বলেন, ‘আমার জমিতে এখন মসুরি ও গম রয়েছে। সকাল থেকে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তাতে দুটি ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। পানি জমলে মসুরির গাছ পচন ধরবে। আর তিন বিঘা জমির গমের প্রায় ৬০ ভাগই শিষ এসেছে। এখন দানাবাধার সময়। বৃষ্টির কারণে গমে ফলন কমে যাবে।’
একই গ্রামের কৃষক খোকা জানান, তাঁর ৫ বিঘা জমিতে আলু রয়েছে। এমনিতে আলুর বাজার খারাপ। তার ওপর বৃষ্টি। বেশি বৃষ্টি হওয়ার কারণে আলুর জমিতে পানি জমে আছে। এতে পচন ধরার সম্ভাবনা রয়েছে। তেরঘরিয়া গ্রামের কৃষক সুমন রেজা বলেন, ‘৪ বিঘা জমিতে ভারতের সুখসাগর জাতের পেঁয়াজের আবাদ করেছি। আর কয়েক দিন পরই জমি থেকে পেঁয়াজ উত্তোলন করব। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আর পেঁয়াজ তুলতে পারব না। এতে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হতে পারে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, ‘বৃষ্টিতে ফসলের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। আমার কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, পরিপক্ব যে ফসলগুলো জমিতে রয়েছে, সেগুলো আবহাওয়া ভালো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জমি থেকে উঠিয়ে নেওয়ার। এ কাজ করলে ক্ষতি কিছুটা কমবে। আর বৃষ্টির পর টানা রোদ হলে কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন কৃষকেরা। আর দুই থেকে তিন দিন পর বোঝা যাবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছেন তাঁরা।’
এদিকে, আবহাওয়া অফিস বলছে, শনিবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীকাল রোববার থেকে সূর্যের দেখা মিলতে পারে। তারপর থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।