হোম > ছাপা সংস্করণ

বিদেশি পুঁজি লগ্নির আগে

আব্দুর রাজ্জাক, প্রকৌশলী

আমরা সব সময়ই বিদেশি বন্ধুদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য অনুরোধ করে বলি, বাংলাদেশে পুঁজি বিনিয়োগ নিরাপদ ও আকর্ষণীয়। বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগ মন্দ নয়, তবে শর্ত থাকতে হবে।

আমাদের এই শ্রমঘন সমাজে যদি বিদেশি শিল্প গড়ে ওঠে, তাহলে বহু বেকারের কর্মসংস্থান হয় এবং জিডিপিতে অবদান রাখা হয়। তবে মাথায় রাখতে হবে, এই পুঁজি বিনিয়োগের ফলে পরিশেষে আমাদের লাভ হয় কি না। সেটা বিবেচনায় নিয়েই বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে হবে।

বিদেশিরা যদি আমাদের দেশে শিল্প স্থাপন করে, সে ক্ষেত্রে তারা তাদের পুঁজির ব্যবহারসহ শিল্প স্থাপনের জন্য যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ নিয়ে আসে। আমরা আমাদের দেশের ভূমি, প্রাকৃতিক সম্পদ (বিদ্যুৎ ও গ্যাস) ব্যবহার করতে দিই। এ ছাড়া তারা যোগাযোগব্যবস্থার জন্য আমাদের স্থল-নৌ-আকাশপথ ব্যবহার করে। বিদেশিদের এসব পুঁজি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের যথেষ্ট সাহায্য করে।

পারিপার্শ্বিক এসব ব্যবস্থা ছাড়াও ট্যাক্স হলিডেসহ তাদের পুঁজি যেন নির্বিঘ্নে ব্যবহৃত হয়, লভ্যাংশ দেশে নিয়ে যেতে পারে, সে ব্যবস্থাও আছে। আমাদের দেশের বহু মানুষ শ্রম দিয়ে এসব বিদেশি শিল্পকারখানার উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।

বিদেশি মালিকেরা যে লাভ করেন, তা থেকে সঠিকভাবে আয়কর দেন কি না এবং আমাদের শ্রমিকেরা যে শ্রম দেন, সেই শ্রমের যথাযথ মজুরি সঠিকভাবে পরিশোধ করেন কি না, তার একটি পরিমাপক ব্যবস্থা থাকা দরকার।

সাভার ইপিজেডে কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান ২০-২৫ বছর ধরে শিল্প স্থাপন করে কয়েক গুণ মুনাফা নিয়ে গেছে। সেসব প্রতিষ্ঠানে যেসব শ্রমিক কাজ করতেন, তাঁদের দৈনন্দিন বেতনাদি পরিশোধ করলেও অবসরকালীন কোনো অর্থ না রেখে, পুরোনো যন্ত্রপাতি ফেলে বিদেশি শিল্পপতিরা তাঁদের লাভ নিয়ে চলে গেছেন। একজন শ্রমিক ওই সব শিল্পে তাঁর শ্রেষ্ঠ শ্রমটা দেন। বিনিময়ে যদি বাকি জীবনটা কোনো গ্র্যাচুইটি, পেনশনের ব্যবস্থা না পান, তাহলে তো আমাদের মানবসম্পদও বিদেশে চলে যায়।

সেই প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের ঋণও পরিশোধ করেনি। এমনকি কোনো কোনো সময়ে পুঁজিবাজারে টাকা আত্মসাৎ করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। তারা বিভিন্নভাবে আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে সঠিকভাবে আয়কর ও ভ্যাট পরিশোধ করেনি। পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বেশি দাম এবং পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে কম দাম দেখিয়েছে। হিসাবের মাধ্যমে তারা প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেনি। যার কারণে দেশ সঠিক আয়কর থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

আইনের মাধ্যমে যদি এমন একটি ব্যবস্থা করা যায়, যেসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে লগ্নি করবে, প্রথম দশ বছর তারা তাদের লাভের সম্পূর্ণটা নিতে পারবে। পরবর্তী পাঁচ বছরে লাভের ৭৫ শতাংশ নিয়ে যাবে, ২৫ শতাংশ এ দেশে ওই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করবে। পরবর্তী পাঁচ বছরে লাভের ৫০ শতাংশ নিয়ে যাবে, ৫০ শতাংশ এ দেশে বিনিয়োগ করবে একই প্রতিষ্ঠানে। এ রকম করে ৩০ বছর তাদের পুঁজি ও লাভ নিয়ে যাওয়ার পরে, আনুপাতিক হারে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা হবে এ দেশেরই মানুষের, যাঁরা প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রম দিয়েছিলেন।

ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারী পরবর্তী সময়ে এই কলকারখানা চালাবেন, নিজ স্বার্থে তাঁরাই মালিক হিসেবে এই কলকারখানা পরিচালনা করবেন। সমবায়ের মাধ্যমে, চাকরির বয়স ও মেধা অনুসারে আনুপাতিক হারে সবাই এই সম্পদের মালিক হবেন। এভাবেই যুগের পর যুগ এটা চলতে পারে। এসব বিদেশি প্রতিষ্ঠান তাদের লগ্নি করা পুঁজি ও লাভ নেওয়ার পরে তাদের আর কোনো মালিকানা থাকবে না। এ রকম ৩০ বছরের শর্ত সাপেক্ষে বিদেশি পুঁজি আকর্ষণ করা রাষ্ট্রের জন্য সমীচীন হবে। অন্যথায় বিদেশি পুঁজিপতিরা আমাদের দেশে এসে শিল্পের নামে সম্পদ লুট করে নিয়ে যাবে।

তাই নতুন করে বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগের আগে আমাদের স্বার্থ রক্ষার্থে একটি টেকসই অবকাঠামো ও বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগ আইন করা চাই। সবার আগে চাই জাতীয় স্বার্থ, শ্রমিকদের স্বার্থ, তথা জনস্বার্থ।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ