দুই দিন আগে যুগান্তকারী এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট (এনজেডসি)। আইসিসির পূর্ণ সদস্যদেশগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ডই প্রথম পুরুষ ও নারীদের সমান ম্যাচ ফি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার নিয়ম চালু করেছে। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট যেভাবে নারী-পুরুষের পারিশ্রমিকে সাম্য এনেছে, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটা কতটা সম্ভব—এমন একটা আলোচনা হচ্ছে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে।
বেতন, ম্যাচ ফি, সুযোগ-সুবিধায় সমতার প্রসঙ্গে আসার আগে দেখতে হবে বাংলাদেশে ছেলে ও মেয়েদের ক্রিকেটে পার্থক্য কতটা। গত মার্চে ঘোষিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কেন্দ্রীয় চুক্তিতে পাঁচ ক্যাটাগরিতে আছেন পুরুষ দলের ২১ ক্রিকেটার। ২০২০ সাল থেকে বিসিবি ক্রিকেটারদের বেতন দিচ্ছে সংস্করণভেদে গ্রেডিং করে। এ বছর কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা পাঁচ ক্রিকেটার আছেন তিন সংস্করণের চুক্তিতে। ক্রিকেটারদের বেতনের গ্রেডিং ও সংস্করণ ঠিক করা হয় পয়েন্টের ভিত্তিতে। খেলোয়াড়েরা পয়েন্ট পেয়ে থাকেন ম্যাচসংখ্যা ও পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। সবকিছু বিবেচনা করে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। মাসে তাঁর বেতন ১০ লাখ ছাড়িয়ে যায় অনায়াসে। ‘এ প্লাস’ গ্রেডে থাকা মুশফিক টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবেই পান সাড়ে ৪ লাখ টাকা আর ওয়ানডেতে ৪ লাখ। পরের গ্রেড ‘এ’ গ্রেডে থাকা একজন ক্রিকেটার শুধু টেস্ট আর ওয়ানডে খেলেই পান সাড়ে ৬ লাখ টাকা। সবচেয়ে নিচে ‘ডি’ গ্রেডে থাকা একজন ক্রিকেটার তিন সংস্করণ খেলে বেতন পান মাসে ৩ লাখ টাকা।
গত তিন বছরে বিসিবি মেয়েদের বেতনও বাড়িয়েছে। সর্বোচ্চ ‘এ’ গ্রেডে বেতন বেড়েছে ৩০ হাজার টাকা। এখন ‘এ’ গ্রেডে থাকা একজন নারী ক্রিকেটার বেতন পেয়ে থাকেন ৮০ হাজার টাকা। ‘বি’ গ্রেডে বেতন ৬০ হাজার টাকা। ‘সি’ গ্রেডে বেতন ৪০ আর সবার নিচে থাকা ‘ডি’ গ্রেডে একজন নারী ক্রিকেটার বেতন পান ৩০ হাজার টাকা। এ বছর বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে আছেন ২৪ জন ক্রিকেটার। পুরুষ আর নারী ক্রিকেটারদের বেতনের পার্থক্যটা ১২ গুণ। পারিশ্রমিকের এই বিশাল পার্থক্য আছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডেও (বিসিসিআই)। তাদের ছেলেদের সর্বোচ্চ গ্রেডে থাকা বিরাট কোহলি মাসে বেতন পেয়ে থাকেন প্রায় ৬০ লাখ টাকা। মেয়েদের সর্বোচ্চ গ্রেডে থাকা হারমনপ্রীত কৌরের মতো একজন নারী ক্রিকেটার পেয়ে থাকেন প্রায় ৫ লাখ টাকা।
লিঙ্গভেদে পারিশ্রমিকের পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু সেই পার্থক্য যেন বেশি না হয়, এমনটাই চাওয়া বিসিবির ইতিহাসে একমাত্র নারী পরিচালক, সাবেক ক্রিকেটার মনোয়ার আনিস খান মিনুর। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘সমান না হোক, বোর্ডের সামর্থ্য থাকলে আরও বাড়িয়ে দিতেই পারে। তবে হ্যাঁ, আমাদের বৈষম্য অনেক বেশি, ওটা আরও একটু কমিয়ে আনতে পারলে ভালো হয়। নিউজিল্যান্ড অনেক এগিয়ে থাকা সভ্য দেশ, সে কারণেই তারা একটা ভালো উদাহরণ তৈরি করতে পারল। এতে এ ধরনের উদ্যোগ নিতে বাকিরা উৎসাহিত হবে, চাপেও পড়বে।’
বিসিবির নারী বিভাগের প্রধান শফিউল আলম চৌধুরী জানান, দেশের সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক বাস্তবতায় পারিশ্রমিকের এ পার্থক্য দ্রুতই দূর করা কঠিন। তবে এটি কমিয়ে আনতে তাঁদের উদ্যোগের কমতি নেই। গতকাল আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘ইতিবাচক ধারায় বৈষম্যগুলো কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আমাদের ছেলেদের ক্রিকেট যে জায়গায়, মেয়েদের ক্রিকেট কি ওই জায়গায়? ছেলেদের জন্য পৃষ্ঠপোষক আছে। লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে কথা বলা সহজ। কিন্তু বাস্তবতাও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবু আমরা এটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। গত তিন বছরে মেয়েদের বেতন, ম্যাচ ফি ও সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছি। তিন বছর আগের সঙ্গে তুলনা করলেই বুঝতে পারবেন, এখানে আমরা এগোচ্ছি নাকি দাঁড়িয়ে আছি।’