এ কী কাণ্ড দেখুন! স্কুলের প্রহরীকে সঙ্গে নিয়ে কিনা সরকারি বই বিক্রি করতে গিয়েছিলেন এক শিক্ষক! কাণ্ডটা ঘটিয়েছেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের হরিরামপুর বালিকা বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী উত্তম কুমার ও জুনিয়র শিক্ষক চামেলি বেগম। অবশ্য এই কাণ্ড ঘটাতে গিয়ে ধরাও পড়েছেন তাঁরা।
আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রোববার রাত ৯টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হরিরামপুরের শিপের বাজারে এক ভাঙারির দোকানে ওই শিক্ষক আর প্রহরী গিয়েছিলেন স্কুলে থাকা বই বিক্রি করতে, বস্তাভর্তি মাধ্যমিক পর্বের সরকারি বই। কিন্তু বই ওজন করার সময় ধরা পড়ে গেলেন। স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে তাঁদের ইউপি সদস্য ফিরোজ কবিরকে জানান। তিনি সেখানে গিয়ে তাঁদের দুজনকে আটক করেন। এরপর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম পারভেজকে ঘটনাটি জানানো হয়। রাত বেশি হয়ে যাওয়ায় শাহ আলম অবশ্য তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে চামেলি বেগমকে বলেন বইগুলো স্কুলে ফেরত নিয়ে যেতে। তবে তাঁকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এদিকে চামেলি বেগম বই বিক্রি করতে নেওয়ার কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, তিনি বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিল দিতে এবং সাউন্ড বক্স ঠিক করতে গুদাম পরিষ্কার করে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের বইগুলো বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। প্রশ্ন অবশ্যই করা দরকার—বই কেন গুদামজাত ছিল? প্রতিবছর সরকারের জোর প্রচেষ্টা থাকে সময়মতো যেন স্কুলের শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে বই পায়। সেখানে কেন একটা স্কুলের বই শিক্ষার্থীদের হাতে না পৌঁছিয়ে গুদামজাত হয়ে থাকবে, এই প্রশ্ন কিন্তু অবান্তর নয়।
আমাদের সমাজে শিক্ষকদের একটা সম্মানের জায়গা ছিল। কতিপয় শিক্ষকের কাণ্ডজ্ঞানহীন কিছু কাজের জন্য এই জায়গাটা দিন দিন নড়বড়ে হয়ে পড়ছে। এই যে চামেলি বেগম একজন শিক্ষক হয়েও স্কুলের প্রহরীকে সঙ্গে নিয়ে বই বিক্রির জন্য বেরিয়ে পড়লেন, সেটা যে কত বড় একটা অন্যায় বা অনৈতিক কাজ, তা হয়তো তিনি ভুলে বসে আছেন। শিক্ষাব্যবস্থাই যদি তিনি না বোঝেন তাহলে আর নৈতিকতা তাঁর ভেতর বাস করবে কী করে?
যে বই ভালো কাজে ব্যবহার করার কথা, যে বই থেকে সমাজ, বিজ্ঞান, ভাষা, দর্শন, গণিতের বিদ্যা শেখার কথা, সে বইকে যদি কোনো শিক্ষক ভাঙারির দোকানে বিক্রি করতে নেন, তাহলে বুঝতে হবে শিক্ষা আর ভাঙারির দোকান মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে! মরিচা পড়েছে শিক্ষায়। এই মরিচা পড়া শিক্ষা নিয়ে আমরা গুটি গুটি পায়ে পৌঁছে যাচ্ছি গাঢ় তিমিরে, যেখান থেকে উত্তরণের পথ বন্ধ হয়ে আছে আমাদের অনৈতিক মানসিকতার জন্য।
শিক্ষা যেখানে আমাদের আলোর পথে নিয়ে যাবে, সেখানে আমরাই শিক্ষাকে এই অন্ধকারে নিয়ে যাচ্ছি। আর এই অনৈতিক মানসিকতার শিকড় নিজেদের ভেতর থেকে উপড়ে ফেলতে না পারলে কখনোই আমরা আলোর মুখ দেখতে পাব না।