দশ-পনেরো বছর আগে মেলায় প্রথম বই প্রকাশ হয়েছিল। সেই তরুণদের অনেকেই আজ পুরোদস্তুর লেখক। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান-গরিমায় নিজেদের আরও সমৃদ্ধ করে চলেছেন তাঁরা। পাঠকের মনের খোরাক মেটাতে নিয়মিতই লিখছেন। নাম নিতে গেলে বহুজনই সামনে আসবেন। মোদ্দাকথা, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের সেতুবন্ধ তৈরির মাধ্যম হিসেবেও ভূমিকা রাখছে অমর একুশে বইমেলা। প্রাণের মেলাকে সবুজ-প্রাণবন্ত করে তারুণ্য। এতেই গড়ে ওঠে আগামীর সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব।
প্রতিবছরের মতো এবারও তরুণ ও নতুন লেখকদের বিপুলসংখ্যক বই আসছে মেলায়। খ্যাতিমান লেখকদের পাশাপাশি এসব বইয়েও আগ্রহ দেখাচ্ছেন পাঠকেরা। তবে অনেক তরুণ লেখকের অভিযোগ, বইয়ের প্রচারণায় প্রকাশকদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পান না তাঁরা। যে কারণে প্রচারের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই তাঁদের মূল ভরসা। প্রকাশনা সংস্থা জ্ঞানকোষ থেকে প্রকাশিত হয়েছে মাহাফুজুর রহমানের প্রথম কবিতার বই ‘আপু’। তরুণ এ লেখক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করে বই সম্পর্কে সবাইকে জানাচ্ছি। মেলার শুরুর দিকেই প্রায় ২০০ কপি বিক্রি হয়ে গেছে। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে বই বিক্রি বাড়বে।’
বাবুই প্রকাশনী নিয়ে এসেছে সাঈদ মাহাদী সেকেন্দারের প্রথম বই ‘প্রেয়সী’। সাঈদ বলেন, ‘বইমেলা তরুণ লেখকদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। কারণ বইমেলায় আমরা পরিচিত হতে পারি বেশি।’ বাবুই প্রকাশনীর বিক্রেতা তাসনিম জানান, ‘নতুন লেখকদের বই নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেকেই। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিভিউ পড়ে এসে বই খোঁজ করছেন।’ প্রচারণার বিষয়ে জানতে চাইলে মাহাদী বলেন, ‘বইয়ের পাঠক-লেখকেরা বই উপহার পেলে খুশি হন। আমার এক বন্ধু আমার লেখা বইটি কিনে তাঁর বন্ধুকে উপহার দিয়েছে। এরপর সেই বন্ধু তাঁর ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেছে। এতে আরও কয়েকজন মেলায় এসে বই ক্রয় করেছেন। এভাবেই আমাদের ক্রেতা বাড়ছে।’
গল্প-উপন্যাস, কবিতার পাশাপাশি ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়েও নতুন লেখকদের বই আসছে মেলায়। আল-হামরা থেকে প্রকাশিত হয়েছে সালাহউদ্দীন সুমনের ‘ভাগীরথী থেকে বুড়িগঙ্গা’ বইটি। আল-হামরার প্রকাশক খান মোহাম্মদ মুরসালিন বলেন, ‘প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হচ্ছে সকল বইয়ের প্রচারণা করা। আমরা ক্যাটালগের পাশাপাশি তরুণদের বই নিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছি, বিভিন্ন জেলার লাইব্রেরিতেও পাঠিয়ে দিয়েছি।’
পাঠক তাসনুভা তামান্না বলেন, ‘বইমেলায় নতুন লেখকদের বই আমাকে বেশি আকৃষ্ট করে। আমি সেগুলো খুঁজে খুঁজে ক্রয় করি। তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম থেকে শুরু করে হুমায়ূন আহমেদের বইও আমি পড়ি।’ তরুণ লেখকদের বই পাঠকপ্রিয়তা পাচ্ছে বলে জানালেন গল্পকার পারভেজ। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক তরুণ লেখালেখি করেন। তাঁদের অনেকেই পরবর্তী সময়ে বই প্রকাশ করেন। তাঁদের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের ভালো একটা যোগসূত্র রয়েছে।
পারভেজ আরও বলেন, ‘শুধু যে গল্প-কবিতা লিখছেন তরুণেরা, তা কিন্তু নয়। তরুণেরা গবেষণামূলক বই দিয়েও পাঠকদের আকৃষ্ট করছেন। তবে আমি বলব, তরুণদের লেখার মানোন্নয়ন করা দরকার। যত্ন নিয়ে কাজ করলে হয়তো ধীরে ধীরে অনেকেই এসব শিখে যাবেন। আমি বিশ্বাস করি, আজকের তরুণেরাই বাংলা সাহিত্যে একদিন বড় অবদান রাখবেন।’
লেখকদের অভিযোগ নিয়ে জানতে চাইলে আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গণি বলেন, ‘প্রচারণায় প্রকাশকেরা সহযোগিতা করেন না—এমন অভিযোগ সত্য নয়। আমাদের প্রকাশনীর ফেসবুক পেজ দেখলেই বুঝতে পারবেন। প্রতিদিন পোস্ট দিচ্ছি, মানুষকে জানাচ্ছি।’ এদিকে গতকাল মঙ্গলবার মেলায় নতুন বই এসেছে ৬৯তটি।